এবারও ঈদের ছুটি কাটাতে সিলেটে আসছেন পর্যটকরা। এরই মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের বুকিং শেষ হয়ে গেছে। সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, উৎমাছড়া, লালাখাল, চা-বাগানগুলো সব শ্রেণির পর্যটকদের প্রধান আকষর্ণ।
এছাড়ার এখানকার পাহাড়, টিলা, ঝর্ণার পাশাপাশি পর্যটকদের এবার ভ্রমণের তালিকায় যোগ হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর। বিশেষ করে ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় টাঙ্গুয়ার হাওরে জোৎ¯œা উৎসব থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চাচ্ছে না। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে হাওরের থৈ থৈ নীলাভ জলে প্রকৃতিপ্রেমীরা উপভোগ করতে পারবেন আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার সৌন্দর্য।
এদিকে, সিলেটের পর্যটন স্পট গুলোতে নেমেছে বিনোদন প্রেমিদের ঢল। ঈদের দিন কোরবানির ব্যস্ততার কারণে বের হতে না পারলেও আজ বুধবার থেকে সরগরম হয়ে ওঠেছে জাফলং, বিছনাকান্দি, সিলেটের সুন্দরবন খ্যাত রাতারগুল, নীলনদ খ্যাত লালাখাল।
আগামী শনিবার পর্যন্ত এ ভিড় বাড়তে থাকবে। অনেক স্পটে যাওয়ার পথ সুগম নয়, কিন্তু ঈদে রাস্তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি পর্যটকদের। প্রকৃতির টানে হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে ছুটে এসেছেন এসব পর্যটন স্পটে।
শাহজালাল দরগাহ গেইটের সাফা আল মারওয়া হোটেলের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানান, তার হোটেলের সবগুলো রুমই বুকিং দেয়া হয়ে গেছে। দুপুরের পর থেকে গেস্টরা আসতে শুরু করেছেন, সন্ধ্যার মধ্যেই অন্যরা এসে ওঠবেন।
একই ভাবে রেইনবো গেস্ট হাউসের ম্যানেজার শাকিল আহমদ জানান, তাদের হোটেলেও সবগুলো রুম বুকিং দেয়া শেষ। আজই গেস্টরা ওঠবেন।
স্থানীয় পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সিলেটের জাফলং। ঈদের দিন বিকাল থেকেই ভাঙাচোরা সড়ক ডিঙ্গিয়ে হাজার হাজার পর্যটকরা ভিড় করেছেন জাফলংয়ে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গেলো বারের চেয়ে এবার পর্যটকদের সংখ্যা কিছুটা কম। কাল বৃহস্পতিবার থেকে ভিড় বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে সুউচ্চ পাহাড়। পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে আসা বিশাল ঝর্ণা। নিচে সারি সারি পাথরের ওপর ছিটকে পড়ছে ঝর্ণার স্বচ্ছ জল। পাহাড়, মেঘ, আকাশ আর স্বচ্ছ জলের সৌন্দর্যের আধার বিছনাকান্দি মুগ্ধতার এক অনন্য রূপ। এই বিছনাকান্দি যাওয়ার রাস্তা এখন সহজ নয়। অনেকটা কঠিন। এরপরও ঈদের বাঁধখোলা আনন্দে পাহাড় বেয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ পানিতে নিজেদের বিলিয়ে দিতে পর্যটকরা ভিড় করেছেন বিছনাকান্দিতেও।
‘সিলেটের সুন্দরবন’ খ্যাত বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) হচ্ছে রাতারগুল। গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের গুয়াইন নদীর দক্ষিণে রাতারগুলের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে এই রাতারগুলে ঢল নেমেছে পর্যটকদের।
এখন রাতাগুলে পর্যটনের মৌসুম। পানির ওপরে ভাসমান জলাবনে হারিয়ে যেতে পরিবার নিয়ে দলবেধে মানুষ ছুটে যাচ্ছে রাতারগুলে। জলের মধ্যে ভেসে থাকা সবুজ বৃক্ষ, মাথার ওপর তার ছায়া, সুনীল আকাশ, নৌকায় করে রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানো তো অদ্ভূত রোমাঞ্চকর এক অ্যাডভেঞ্চারই! এই বনে কিছু সাপ ছাড়াও আছে বানর, মাছরাঙ্গা, পানকৌড়ি, কানা বক, সাদা বক, ঘুঘুসহ নানা জাতের অসংখ্য পাখি।
কেউবা আবার হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারতে ছুটে এসেছেন সিলেটে। হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত দরবেশ-ওলিকুল শিরোমণি।
হযরত শাহজালাল (র.) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাই, সারাদেশের মানুষের শাহজালাল (র.) মাজার দেখার আগ্রহ ব্যাপক। পাশাপাশি সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো নিজ চোখে দেখতে অগণিত মানুষ ছুটে আসেন সিলেটে।
সিলেট জেলা পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সুরজ্ঞন চাকমা ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, সিলেটের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের বাধার মুখে না পড়েন সেটিও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।