আজ তবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে । হজযাত্রীদের ইহরাম বাঁধার সঙ্গে সঙ্গে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এটা হজের মৌলিক আহকামগুলোর (অপরিহার্য পালনীয়) একটি। হাজীরা সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী ৭ জিলহজ মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর মিনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। আজ ( বাংলাদেশ সময়) সূর্যোদয় থেকে মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হল হজের আনুষ্ঠানিকতা। কাল সূর্যোদয় পর্যন্ত তারা মিনায় অবস্থান করবেন। পবিত্র মক্কা নগরী থেকে তাঁবুর শহরখ্যাত মিনার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. জয়নব মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হজের আহকামে ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের আগে থেকে ৯ জিলহজ সূর্যোদয় পর্যন্ত মিনায় অবস্থানের শর্ত। যেহেতু ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের আগে থেকে মিনায় অবস্থানের নিয়ম। তাই সতর্কতাবশত আগের রাতেই মিনায় চলে যান হজ যাত্রীরা।
ড. জয়নব আরও বলেন, আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনটিকে প্রচলতি অর্থে মূল হজের দিন মনে করা হয়। আরাফাত ময়দানে অবস্থানের দিন হচ্ছে ৯ জিলহজ। বাংলাদেশে ৮ জিলহজের তারিখটি সৌদি আরবে ৯ জিলহজ। সেই হিসাবে কাল রোববার হজ পালিত হবে। এদিন আরাফাত ময়দানে যাবেন হজযাত্রীরা। ‘লাব্বাইকা, আল্লাহুমা লাব্বাইক’ এই ধ্বনিতে আরাফাতের খোলা আকাশ মুখরিত করবেন তারা।
নিয়মানুযায়ী আজ (বাংলাদেশ সময়) ফজর থেকে কাল ফজরের নামাজ পর্যন্ত অবস্থান শেষে হাজীরা আরাফাতের ময়দানে রওনা হবেন। আরাফাতে গিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। সেখানে হজের খুতবা শুনবেন। জোহর এবং আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন। আরাফাতে সারা দিন কাটাবেন খোলা আকাশের নিচে। আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। মুজদালেফাতেও খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। সেখান থেকে জামারায় শয়তানকে মারার জন্য পাথর (কংকর) সংগ্রহ করে নেবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে হাজীরা আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় হাজীদের চারটি কাজ থাকে। তা হচ্ছে, পশু কোরবানি করা, মাথা মুণ্ডন, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও ইহরাম খোলা। এই আহকামের অংশ হিসেবে হাজীরা মিনায় গিয়ে ১০ জিলহজে কোরবানি করবেন এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটাবেন। এছাড়া বাকি দুটি কাজও করবেন। এরপর মক্কায় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ এবং সা’ঈ করবেন। এই তাওয়াফের নাম বিদায়ী তওয়াফ। এর আগে সৌদি আরব গিয়েই হজযাত্রীরা প্রথমে একবার অবশ্যই পবিত্র কাবা ঘর তওয়াফ করেন। বিদায়ী তওয়াফ সেরে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করে প্রতিদিন তিন শয়তানকে পাথর মারবেন। এভাবে সম্পন্ন হবে হজের গোটা আনুষ্ঠানিকতা। প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ নিজ মোয়াল্লেম কার্যালয় থেকে গাইডের মাধ্যমে মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে গমন, অবস্থান, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কোরবানির নিয়মকানুন সবকিছু আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া হয়।
ড. জয়নব বলেন, যারা হজ করতে পারেননি, তাদের জন্যও ইসলামে হজের দিনের বিশেষ সুখবর আছে। তা হচ্ছে, হাজীরা ছাড়া সারা বিশ্বের মানুষ হজের দিন বা ৯ জিলহজ রোজা রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে সারা বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।
মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে গাইড জানিয়ে দেন, মক্কায় বাসাতেই ওজু ও গোসল সেরে সেলাইবিহীন দু’টুকরা কাপড় পরে হজের নিয়ত করতে হবে। ইহরামের কাপড় পরতে হবে। অতিরিক্ত এক সেট সঙ্গে নিতে হবে। এছাড়া এক সেট সাধারণ পোশাক (শার্ট-প্যান্ট বা পায়জামা-পাঞ্জাবি), পেস্ট, টুথব্রাশ, সাবান, মোবাইল ফোন, চার্জার, মুজদালিফায় রাতে অবস্থানের জন্য চাদর, হাওয়াই বালিশ ব্যাগে রাখা বাঞ্ছনীয়। তবে ব্যাগটি যেন হালকা হয় সেদিকে খেয়াল রাখা ভালো। কারণ নিজের বোঝা নিজেকেই বহন করতে হবে।