নামের শুরুতে মুহাম্মাদ লেখা প্রচলিত একটি রীতি হলেও এটা ধর্মীয় কোনো বিধান নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের মধ্যে নামের শুরুতে মুহাম্মাদ (পূর্ণ কিংবা সংক্ষিপ্ত আকারে) লেখার রীতি বেশ পুরনো।এ উপমহাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নামের আগে মুহাম্মাদ লেখার প্রচলন সাধারণত দেখা যায় না। অন্য দেশগুলোতে মুহাম্মাদ ব্যবহৃত হয় একটি স্বতন্ত্র নাম হিসেবে।
তবে নাম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার দিক থেকে শুধু মুসলিম বিশ্বে নয়, পশ্চিমা দেশগুলোতেও নবজাতকের নাম মুহাম্মাদ রাখার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ব্রিটেনের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস নবজাতকের নাম সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে নবজাতকদের নাম রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘মুহাম্মাদ।’
ব্রিটেনে নামের ওপর সর্বপ্রথম ১৯২৪ সালে একটি জরিপ করা হয়। ওই জরিপে ব্রিটেনের ১০০ জনপ্রিয় নামের মধ্যে উঠে আসে ‘মুহাম্মাদ’। ধীরে ধীরে এ নামের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০১৬ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ‘মুহাম্মাদ।’
সম্প্রতি ব্রিটেনে নবজাতকদের জনপ্রিয় নামের একটি তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় ইংরেজিতে মুহাম্মাদ নামটি ইংরেজিতে- Muhammad, Mohammed, Mohammad এবং Muhammed এই চাররকম বানানে লেখা হয়েছে। তবে মুহাম্মাদ নামের ইংরেজি বানানের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও সংখ্যার দিক থেকে এ নামটিরই অবস্থান প্রথম।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি কারণে এবং ইসলামের নবীর নাম, মুসলিম বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব যেমন মুহাম্মদ আলী ক্লে (আমেরিকান মুষ্টিযোদ্ধা) ও ব্রিটেনের চ্যাম্পিয়ন রানার মোহাম্মদ ফারাহর কারণে এই নামের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রিটেনের আরবি স্কুলের শিক্ষক ইবরাহিম উসমান বলেন, বিভিন্ন বর্ণমালায় লিখিত এই নামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সব নামই- ‘মুহাম্মাদ।’ শুধু বিভিন্ন বর্ণমালায় লেখা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব শব্দ ইংরেজিতে নেই, সেগুলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইংরেজি বর্ণমালায় লেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ‘O’ স্থানে ‘u’ ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে নামের কোনো পার্থক্য হবে না, তদ্রুপ অর্থও থাকবে অপরিবর্তিত।
বাংলাদেশেও অবশ্য মুহাম্মাদ নামের বানানে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। মুহাম্মাদ, মোহাম্মদ, মো., মোঃ, মহম্মদসহ আরও বেশকিছু বানানে লেখা হয়। তবে ইসলামি স্কলাররা মুহাম্মাদ লেখার বিষয়ে উৎসাহিত করে থাকেন।
আরেক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি রাখা হয় মুহাম্মাদ নামটি। সেখানে এ নামের বানান হেরফেরের কথা বলা হয়েছে। পরিসংখ্যানটি সংগ্রহ করা হয়েছে জনপ্রিয় কিছু বেবি কেয়ার ও প্যারেন্টিং সাইট (বেবি সেন্টার, বেবি নেইম উইজার্ড ইত্যাদি) থেকে।
দ্য কলাম্বিয়া ইনসাইক্লোপিডিয়ার মতে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুহাম্মাদ নামের বানান এবং উচ্চারণে পার্থক্য থাকলেও মুহাম্মাদ নামটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১৫ কোটি মানুষ রয়েছে, (বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান) যাদের নাম মুহাম্মাদ।
নবজাতক শিশুদের নাম মুহাম্মাদ রাখা প্রসঙ্গে অভিভাবকদের মত হলো- প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা এবং তাকে স্মরণ করাই এর অন্যতম কারণ। তারা সবাই বিশ্বাস করেন, মুহাম্মাদ নামটি সুখ এবং সমৃদ্ধি আনে।
মুহাম্মাদ অর্থ প্রশংসিত। আরবি ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটির মূল ধাতূ হচ্ছে ‘হা’ ‘মীম’ ‘দাল’ অর্থ্যাৎ হামদুন। হামদুন শব্দের অর্থ প্রশংসা, সন্তুষ্টি, কৃতজ্ঞতা, প্রতিদান, হক আদায় করা ইত্যাদি। আর হামদুন থেকেই ‘তাহমিদ’ গঠিত। এর অর্থ হলো- সদাসর্বদা প্রশংসা করা হয়। সুতরাং ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটির অর্থ হলো সদাসর্বদা যার প্রশংসা করা হয়।
কোরআনে কারিমে এ নামটি চার বার এসেছে। সেগুলো হলো- সূরা আলে ইমরান- ১৪৪, সূরা আহযাব- ৪০, সূরা মুহাম্মাদ- ২ ও সূরা আল ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াত।
-ডেইলি মেইল অবলম্বনে