ঈদে বাড়ি যাবেন? বাসে করে? আগাম টিকিট কাটা নেই? তাহলে সঙ্গে কয়টা টাকা বেশিই নিতে হবে। কারণ বাসে করে গেলে ভাড়া কত গুণতে হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সকাল থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের স্রোত দেখা যায় সায়েদাবাদ টার্মিনালে। যাত্রী চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বাস ভাড়া। নির্ধারিত ভাড়া কত, সে প্রশ্ন যাত্রীরা যতই করুক না কেন পরিবহন শ্রমিকরা আদায় করছেন দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি। আইনের বালাই নেই, জোরজবরদস্তিই এখানে মুখ্য।
এই টার্মিনাল থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখী বাসের আগাম টিকিট দেয়া হয় না বললেই চলে। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না টিকিট। শ্যামলী, হানিফসহ চেয়ারকোচগুলির টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে অনেক আগেই। আর এই সুযোগে যেমন পারছে তেমন ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে বিআরটিএর মনিটরিং সেল থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জানতে চাইলে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী বাসের ভাড়া ১৯৫ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো বাস আদায় করছে চারশ, কোনটা বা পাঁচশ টাকা। লোকাল তো বটেই, তিশা, প্রাইমের মত প্রতিষ্ঠিত সব কোম্পানির বাসের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ রয়েছে।
স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ কুমিল্লা যাওয়ার জন্য সায়েদাবাদ বাস টামিনালে এসেছেন রাজউকের কর্মকর্তা আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘গাড়ির সংকট দেখিয়ে তারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে আমাদের কাছ থেকে। আগে যেতাম ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে। আজ বলছে পাঁচশ টাকা লাগবে। পুরো গাড়ি খালি থাকলেও বলছে সিট নাই।’
কেন অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লাগামী প্রাইম গাড়ির টিকিট প্রদানকারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাস্তায় যানজটের কারণে তেল খরচ হয় বেশি। আসা যাওয়ায় অনেক সময় লাগে। এ জন্যই আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি।’
এই টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার দিকেও যায় গাড়ি। গাইবান্ধাগামী ভাইবন্ধু পরিবহন, শাওন পরিবহন, সোনালী পরিবহনসহ প্রায় প্রতিটি গাড়িতে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
কথা হলো গাইবান্ধাগামী রিয়াদ পরিবহনের চালক স্বাধীনের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঈদে আসলে ঢাকা থেকে ট্রিপ গেলে আসতে হয় খালি। আর ঈদের দুই তিন দিন আমরা যাত্রীদের কাছে একটু বেশিই ভাড়া রাখি। গাইবান্ধার ভাড়া নিচ্ছি এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। যার কাছে যেমন নেওয়া যায় আর কি।’
যাত্রীরা কিছু বলে না?-জানতে চাইলে এই চালক বলেন, ‘যারা যায় তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, তারা কিছু বলে না। আমরা যা চাই তাই দিয়ে যায়।’
যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে এই টার্মিনালেই বসানো হয়েছে বিআরটিএর অস্থায়ী মনিটরিং সেল। এখানে দায়িত্বরত প্রণব চন্দ্র নাগের সঙ্গে কথা হলো। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, আসলে ‘সকাল থেকেই তারা এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। আমরা তিশা পরিবহনের কয়েক জনের অতিরিক্ত ভাড়া ফিরিয়ে দিয়েছি। বিষয়টি কন্ট্রোলরুমে জানিয়েছি। তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেবে।’
বিআরটিএর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অতিরিক্ত ভাড়া শুধু সায়েদাবাদেই নয় ঈদের সময় সব টার্মিনালিই এই কাজটি করা হয়। এ জন্য বিআরটিএর পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগরে পাঁচটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।’
মহাখালী টার্মিনালেও একই নৈরাজ্য
রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালেও একইভাবে যাত্রীদের পকেট কাটতে দেখা গেছে পরিবহন কোম্পানিগুলোকে। ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে দেড়শ টাকার ভাড়া দেয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। ঢাকা-নেত্রকোনা রুটেও ২২০ টাকা ন্যায্য ভাড়া হয়ে গেছে ৫০০ টাকা। ঢাকা-বগুড়া রুটে নির্ধারিত ২৮০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। একইভাগে ঢাকা-রংপুর রুটে নির্ধারিত ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৯০০ টাকা। ঢাকা-সিরাজগঞ্জ ২০০ টাকার জায়গায় নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে নির্ধারিত ভাড়া ৩৮৫ টাকার চার্ট টানানো আছে টার্মিনালেই। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে পরিবর্তে ৬০০ টাকা। একইভাগে ঢাকা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া রুটে ১৭০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা এবং ঢাকা-সিলেট রুটে ৩৬০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা।
কেন এত বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে এসআই পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবদুল মান্নান বলেন, ফেরার সময় বাসে যাত্রী থাকে না। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একটু বেশি ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে।
এই টার্মিনালে কাজ করা বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, , ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাছাড়া যাত্রীদের সমস্যা দেখার জন্য এখানে অভিযোগ বক্স রাখা আছে।