প্রথমেই থাকে ট্রেন মানুষের ঈদ যাত্রায় বরাবরই পছন্দের ।
মহাসড়কে যানজট, এই পরিস্থিতি ট্রেনের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি ট্রেনই ছাড়ছে উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে। কামরার ভেতরে তো বটেই যাত্রীরা অবস্থান নিয়েছে ছাদেও।
সকাল থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন পরিণত হয়েছে জনারন্যে। বসার জায়গা নেই, নেই হাঁটাহাটির উপায়। কাঙ্ক্ষিত ট্রেনে নির্ধারিত আসনে বসাই এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভিড়ের কারণে সহজে যেতেই পারছে না যাত্রীরা। প্রবীণ, শিশু আর নারীদের বিড়ম্বনা সবচেয়ে বেশি।
ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির তিন দিন পর কমলাপুরে যাত্রীদের ভিড় দেখেই বোঝা গিয়েছিল শুক্রবার থেকে বাড়ি ফিরতে আগ্রহী মানুষ। সেই ধারণাই সত্য প্রমাণ হলো।
সকাল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড় উপচেপড়া। প্রতিটি ট্রেন ছেড়েছে যাত্রী বোঝাই হয়ে। কমলাপুরের পর যারা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠার অপেক্ষা ছিলেন তাদের কয়জন এই ট্রেনে চাপতে পারবেন তা নিয়ে সংশয়ের কথা বলছেন যাত্রীরাই।
তবে একদিন থেকে কিছুটা স্বস্তি আছে যাত্রীদের। সকালে যে কয়টি ট্রেন ছেড়েছে, সেগুলোর প্রায় সব কটিই ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ে।
রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা সকাল নয়টায়। কিন্তু তার আধাঘন্টা আগেই ট্রেনটি যাত্রীবোঝাই হয়ে যায়। কোচের ভেতরে ঠাঁসা যাত্রী, তিল ধারণের ঠাঁই নেই, চলছে ধাক্কাধাক্কি। ট্রেনের ছাদেও অবস্থান নেয় কয়েকশ যাত্রী। একই চিত্র দেখা যায় দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেসেও।
প্লাটফর্মে বসার আর কোন জায়গা খালি না থাকায় অনেকেই মেঝেতে বসে পড়েছেন। এর মধ্যে হাল আমলের ক্রেজ সেলফি তুলতে ব্যস্ত তরুণররা। নিজেরা তো বটেই স্বজনদের এই যাত্রার স্মৃতি ফ্রেমে ধরে রাখতে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় চলছে ক্লিকের পর ক্লিক। আর ডিজিটাল যুগে সেসব ছবি মুহূর্তেই চলে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বন্ধু বা স্বজনরা জানতে পারছেন, প্রিয় মানুষ আসছে তাদের কাছে।
স্টেশনের মেঝেতে বসেছিলেন আলতাফ আহমেদ আর তার স্বজনরা। সঙ্গে দুটি বড় ব্যাগ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘জীবিকার প্রয়োজনে শহরে থাকলেও মন পড়ে থাকে গ্রামে, যেখানে শৈশব কেটেছে। ঈদ আসলে যাত্রা ভোগান্তি মেনে নিয়েই যাই সবাই। গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ায় মনে আলাদা প্রশান্তি কাজ করে। আর এ কারণে যাত্রার পুরো পথে এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। তখন আর কষ্টের কথা মনেই থাকে না।’
ঈদযাত্রা নিয়ে কথা হয় কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশ চক্রবতীর সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যাত্রীদের যাত্রা নিবিঘ্ন করতেই আমরা শতভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিদিন ৩১টি আন্তঃনগরসহ ৬৯টি ট্রেন ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ হাজারেও বেশি যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে।’
ঈদে যাত্রীচাপ সামলাতে নির্ধারিত ট্রেনের সঙ্গে আরও ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চলছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন বিলাসবহুল কোচ নিয়ে চলছে সিলেট রুটের পারাবত এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস, দিনাজপুর রুটের একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস, খুলনায় চিত্রা এক্সপ্রেস এবং বৃহস্পতিবার চালু হওয়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। নতুন ঝকঝকে বগিতে যারা চড়েছেন, তাদের মন একট বেশিই প্রফুল্ল, বিশেষ করে শিশুরা।