মিয়ানমার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে গবাদি পশু বৈরী আবহাওয়া এবং দেনা-পাওনা সমস্যায় কয়েক মাস পশু আমদানী বন্দ থাকলেও টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে । সেই সাথে চোরাইপথেও আসছে। সব মিলে এবারের কুরবানে গবাদি পশুর সংকট হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন টেকনাফের গবাদি পশু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে বর্তমানে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর এবং টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছে প্রচুর সংখ্যক গবাদি পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুদ রয়েছে। কুরবানের আগে আরও অন্ততঃ কয়েক হাজার গবাদি পশু মিয়ানমার থেকে আমদানী হওয়ার বা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দাম সহনীয় পর্যায়ে না থাকায় আশানুরুপ বিক্রি হচ্ছেনা। অথচ গত বছর এসময়ে প্রচুর পরিমাণে গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল।
টেকনাফ স্থল বন্দর কাস্টমস সুত্রে জানা যায়, আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ১৬০টি গরু, ১ হাজার ৩৭৬টি মহিষ এবং ১১টি ছাগল আমদানী করা হয়েছে। এসব গবাদিপশু থেকে সরকার ১২ লাখ ৭০ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৭ দিনে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোর দিয়ে আমদানী হয়েছে ৪০২টি গরু, ২১৮টি মহিষ এবং ১৬টি ছাগল। এসব গবাদিপশু থেকে সরকার ৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। গত বছর আগস্ট মাসে ১ হাজার ৯৫৪টি গরু, ১ হাজার ৬২টি মহিষ এবং ৩৮টি ছাগল আমদানী করা হয়েছিল। এসব গবাদিপশু থেকে সরকার ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকার রাজস্ব পেয়েছিল।
গবাদিপশু ব্যবসায়ীদের মতে গত ২ মাসে করিডোরের মাধ্যমে বৈধ ভাবে এবং চোরাইপথে অবৈধ ভাবে ১০ হাজারেরও বেশী গবাদিপশু এসেছে। টেকনাফের শীর্ষ গবাদিপশু ব্যবসায়ী টেকনাফ সদর ইউপির মেম্বার আলহাজ্ব আবু ছৈয়দ বলেন বর্তমানে শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোরে কয়েক শত এবং টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছে প্রচুর সংখ্যক গবাদি পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুদ রয়েছে। কিন্ত ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী (পার্টি) টেকনাফে আসেননি। অথচ গত বছর এসময়ে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে। এবছর কুরবানির পশু সংকট হবে বলে মনে হয়না। কুরবানির পশু আমদানি, বিক্রি, পরিবহন ইত্যাদিতে কোন সমস্যা নেই বলে তিনি দাবি করেন। টেকনাফ সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ দিদার হোসেন কুরবানির পশু সংকট নেই বলে দাবি করে বলেন শুধু শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোরেই ৫০০ এবং টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছে অন্ততঃ ১০ হাজারেরও বেশী গবাদি পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুদ রয়েছে।
এদিকে কৃত্রিম উপায়ে স্বল্প সময়ে গরু মোটা তাজা করণে ব্যবহার করা হচ্ছে এক ধরনের ঐষুধ। গত কোরবানীর ঈদে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে গরু আসার কারণে লাভবান হতে না পারলেও পিছিয়ে নেই তাদের আশা। এবারের ঈদে বেশী লাভবান হবেন এমনটা আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা গরু মোটা তাজা করণে কোন ইনজেকশন বা ঔষুধ ব্যবহার করা হচ্ছেনা বলে দাবী করে জানান খড়, ভূষি, দিয়ে গরুর খাবার যোগান দেয়া হচ্ছে। তা ছাড়া গরু মোটা তাজা করণে কয়েক মাস পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিতে হয় বলে তাঁরা দাবী করেন। টেকনাফে সরকারী ভাবে বড় ধরনের কোন খামার বা গরু মোটা তাজা করণ প্রকল্প না থাকলেও গ্রাম-গঞ্জে স্বল্প আয়ের মানুষগুলো বাড়তি লাভের আশায় কোরবানীর ঈদের কয়েক মাস পূর্ব থেকে গরু মোটা তাজা করতে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন। উপজেলা পশু হাসাপাতালের ডাঃ আব্দুর রহীম জানান এক সময় ডেক্সা মেথাসন ইত্যাদি জাতীয় হরমুন বৃদ্ধির ঔষুধ খাওয়ানোর প্রচলন ছিল। এ ঔষুধ সেবনের ফলে গরুর মাংস দ্রুত বৃদ্ধি হলেও জীবন বিপন্ন হত। তিনি জানান প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে উৎসাহী উদ্যোগী খামারীদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় খামারীদের বিপদজনক পথ থেকে সরে আসার আহবান জানানো হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান দানাদার খাদ্য যেমন খৈল, ভুষি, ও খুদ কুঁড়ার দাম বৃদ্ধির কারনে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তারপরও গত বারের চেয়ে দাম ভাল পাওয়ার আশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশ উজ্জীবিত। আগে গরু মোটা তাজা করণের ক্ষতিকর ইনজেকশন ব্যবহার করা হত। পশু হাসপাতালের নজরদারীর কারণে ব্যবসায়ীরা সচেতন হওয়ায় এখন আর কেউ ইনজেকশন ব্যবহার করেনা। অপরদিকে পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে টেকনাফ উপজেলার ব্যবসায়ীরা গরু মোটা তাজা করতে নিষিদ্ধ মিয়ানমারের ডেক্সামেথাসোন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারতনঃ এসব ওষুধকে স্থানীয় ভায়ায় “পাম বড়ি” বলা হয়। এসব ওষুধ খাওয়ানোর ফলে গরু দ্রুত মোটাতাজা হয় ঠিকই, কিন্ত তা পশুর পাশাপাশি মানব দেহের জন্যও ভয়ানক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব গরুর মাংস মানুষের শরীরের জন্য সদুর প্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। টেকনাফের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গ্রামাঞ্চল থেকে দুর্বল গরু কিনে কিছুদিন লালন-পালন করার পর গরুকে নিষিদ্ধ মিয়ানমারের ডেক্সামেথাসোন ওষুধ খাওয়ানো হয়। এতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেশ গরু মোটাতাজা হয়। এর ফলে গরু দেখতে আর্কষনীয় হয়ে উঠায় ঈদুল আজহার হাটে ভালো দাম পাওয়া যায়। সাবরাং সিকদার পাড়ার এক ব্যবসায়ী বলেন এ ব্যবসায় দেড় থেকে দুই মাস পরিশ্রম করলে বেশ ভালো টাকা রোজগার করা যায়। আমি কয়েক বছর হলো এভাবে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করি। ওষুধ মিশ্রিত মাংস খেলে ক্ষতি হয় কেউ তো কোনো দিন বলেনি। জানা যায়, মোটা তাজাকরণ নিষিদ্ধ বড়ি খাওয়ানোর ফলে পশুর যকৃত ও কিডনিতে পানি জমে। ওই পানি শরীর থেকে বের হতে না পেরে মাংসে সঞ্চারিত হয়। ফলে গরু মাত্রাতিরিক্ত ফুলে যায়। এমনকি এসব বড়ি খাওয়ানো গরু পশুর হাটে, পথিমধ্যে এবং কিনে নিয়ে যাওয়ার পর কুরবানী করার আগেই হঠাৎ মারা যাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ টিটু চন্দ্র শীল বলেন, এ ওষুধ গরু মোটা তাজা করার জন্য নয়। তারপরও এ ধরনের ওষুধ গরুকে অতিরিক্ত খাওয়ালে তা যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এসব গরুর মাংসও মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |