প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন , দেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে , সকলের অংশগ্রহণেই দ্রুততম সময়ে আমরা দেশকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০১৬’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে দেশের ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা দেশের সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছি। সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আছেন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আছেন, পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা রয়েছেন-প্রত্যেকেই যদি উদ্যোগ নেন, আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তিনি বলেন, দেশটা আমাদের। আমাদেরই এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। যাতে আমরা মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারি। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে এবং দারিদ্র্যমুক্ত করতে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফউজ্জামান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রুহুল আমিন সরকার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা’র একটি শুভেচ্ছা বাণীও পড়ে শোনানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলবো, আপনারা একটা মহৎ পেশায় আছেন। জাতির পিতা প্রায়ই বলতেন ‘সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই।’ আপনারা হচ্ছেন সেই মানুষ গড়ার কারিগর। তিনি বলেন, ‘আপনারা পারেন-নীতি ও মূল্যবোধের চর্চা শিখিয়ে দেশের প্রতিটি শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। ভালো-মন্দ কিংবা ন্যায়-অন্যায় বিবেচনার জ্ঞান এবং দেশাত্মবোধের শিক্ষা দেয়া আপনাদের দায়িত্ব। সরকারে শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬-এ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিলাম। আমাদের পদক্ষেপের ফলে মাত্র দু’বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮ লাভ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোটের ২০০১-২০০৬ শাসন আমলে সাক্ষরতার হার বাড়েনি। উল্টো কমে ৪৪ শতাংশে নেমে যায়। দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ দৃষ্টিশক্তি থাকতেও এক ধরনের দৃষ্টিহীনতায় ভোগেন। তাই সবার মনের-জ্ঞানের চোখ খুলে দিতে, আপন ভালো-মন্দ বুঝে নিতে আমরা ব্যাপক ভিত্তিক সাক্ষরতা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর ১লা জানুয়ারি দেশব্যাপী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমরা গত ৭ বছরে বিনামূল্যে ১৯৩ কোটি বই বিতরণ করেছি। পহেলা জানুয়ারি ২০১৬ দেশব্যাপী ‘বই উৎসব’ পালিত হয়েছে। প্রাথমিক ও গণমুখী শিক্ষার প্রসারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন- সরকার ২০১০ সালে আধুনিক-বিজ্ঞানসম্মত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা-শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, আচরণ ও ভাষা শিখানোর মৌলিক স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি-উপবৃত্তি চালুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হতে বিভিন্ন পর্যায়ে দেড় হাজার দরিদ্র-মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দিচ্ছি। তিনি বলেন, ১০০০ কোটি টাকার সীড মানি দিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ গঠন করেছি। এখান থেকে প্রাথমিক হতে ডিগ্রি পর্যন্ত ১ কোটি ২৮ লাখ ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। সারা দেশের ৪ হাজার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করতে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে। এখন দেশে উপবৃত্তি প্রাপ্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। ২০১০ সালে উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা ৪৮ লাখ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প ৬৪ জেলা’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহকারী শিক্ষকের বেতন বাড়ানো হয়েছে। ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ার হার আমরা ?৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আনন্দ স্কুলে বিনামূল্যে বই দেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে পোশাক ও উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে আনন্দ স্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৩৬ জন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031