পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সরকারি এ সিদ্ধান্তের পর ফের আলোচনায় মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়টি। ঘটনার তিন মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির বিষয় জানাতে পারেনিন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে অব্যাহতির বিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারির পর বাবুল আক্তার দীর্ঘ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হলেও গতকাল দুপুরের পর তিনি তার শ্বশুরের বাসায় ফিরেন বলে জানানো হয়েছে। তার শ্বশুর জানিয়েছেন, বাবুল তার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন। তবে কোন আত্মীয়ের বাসায় তা তিনি জানেন না। এদিকে মিতু হত্যার তিন মাস হয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি তদন্তে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিখোঁজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মুছা’য় আটকে আছে তদন্ত। তাকে পাওয়া গেলেই সব রহস্যের জট খুলে যাবে। অন্যদিকে মুছার স্ত্রীর দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অনেক আগেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ মুছার পরিবারের দাবি অস্বীকার করে আসছে। একাধিক সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ৫ই জুন জিইসি মোড়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটার পর এখন পর্যন্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতুর খুনের ঘটনায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। মুছা নামের এক আসামিকে খুঁজে পাওয়া না গেলে এই ঘটনার জট সহজে খুলছে না বলে বলে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল এমন আভাস দিয়েছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
মুছার স্ত্রী পান্না আকতার বলেন, গত ২২শে জুন আমার স্বামীকে বন্দর এলাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। অথচ তারা বলছে, তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা উদ্বিগ্ন। আমার স্বামী যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। কিন্তু কেন তাকে ধরে নিয়ে বলছে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল বুধবার দুপুরে নগর পুলিশ কার্যালয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বাবুল আকতারের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল ওয়াসিম, আনোয়ার, রাশেদ, নবী, শাহজাহানসহ ৭-৮ জন। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে রাশেদ। এই ঘটনায় মুছার সঙ্গে কালু নামের অপর এক আসামিকেও হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
কিন্তু খুনের মূল নির্দেশ দাতা মুছাকে এখনো খুঁজে বের করা যায়নি। সে কোথায় আছে সেই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তারা। ঘটনার পরপরই বাবুল আকতার নিজেই তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছিলেন।
স্ত্রী মিতুকে হারিয়ে অনেকটা একাকী হয়ে জিইসি মোড়ের বাসা ছেড়ে ঢাকার বনশ্রী এলাকায় শ্বশুরের বাড়িতে চলে যান পুলিশ সুপার বাবুল আকতার। যদিও এই ঘটনার পর বাবুল আকতার দাবি করেন, তার কাছ থেকে জোর করে চাকরি থেকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে চলতি বছরের গত ৯ই আগস্ট তিনি চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেছিলেন সরকারের উচ্চপর্যায়ে।
আদালত সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন ওয়াসিম ও আনোয়ার জবানবন্দিতে জানিয়েছে, সন্ত্রাসী মুছা তাদের হত্যা করার জন্য নির্দেশ দেয়। মিতুকে খুন করার পরপরই টিভি খুলে তারা জানতে পারে নিহত মহিলা পুলিশ সুপারের স্ত্রী। এরপর এই ঘটনা মুছাকে জিজ্ঞেস করলে সে চুপ করে থাকতে বলে। এই সময় বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। নিজেকে একজন পুলিশের বড় সোর্স বলেও সে জানায়।
এই বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, এখনো মুছাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সেই এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা। কার নির্দেশে সে খুন করতে লোক ভাড়া করেছিল তা পরিষ্কার হয়ে যাবে যদি তাকে পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, কোনো কিছুই আগাম বলতে পারছি না। শিওর না হয়ে কী করে বলবো কার নির্দেশে খুন হয়েছে। তবে এখনো আসামি ধরা বাকি আছে। মুছাকে পাওয়া গেলে রহস্যের জট হয়তো খুলবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |