আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধান রক্ষার নেয়া শপথ ভঙ্গ করলেও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে না বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘এই শপথ ভাঙলে মন্ত্রিত্ব থাকবে না- এ বিষয়ে কোনো আইন নেই।’
দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, ‘আপিল বিভাগের আটজনের মধ্যে পাঁচ বিচারপতি বলেছেন,শপথ ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু এজন্য তাদের মন্ত্রিত্ব বাদ দেয়ার কথা বলেননি। বাকি তিনজন বলেছেন, এ ইস্যুতে যেহেতু কোনো রুল ইস্যু করা হয়নি, তাই এটি আদালতের আলোচনায় আসে না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাব আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানে এমপিদের বিষয়ে যা বলা আছে, তা মন্ত্রিদের বেলায় প্রযোজ্য নয়।’
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দুই মন্ত্রী অবমাননাকর মন্তব্য করেন। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। আর গত ২৭ মার্চ দুই মন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বিচারব্যবস্থা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে দুই মন্ত্রী সংবিধান রক্ষায় করা শপথ ভেঙেছেন।
সর্বোচ্চ আদালত থেকে এমন রায় আসার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দুই মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের দণ্ড দেয়ার দিন ২৭ মার্চ থেকে তাদের সই করা সব ফাইলও বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সুপ্রিমকোর্টের এই রায়ের পর খাদ্যমন্ত্রী এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি জেনেবুঝে এমন মন্তব্য করেননি। তবে আদালতের রায়ের পর পদত্যাগের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি দুই মন্ত্রীর কেউ।
এরই মধ্যে দুই মন্ত্রীর পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন একজন আইনজীবী। গত মঙ্গলবার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আবারও শুনানির দিন ঠিক করেছেন দুই বিচারপতি।
উচ্চ আদালতে শুনানিতেও উঠে এসেছে, শপথ ভঙ্গ করলে সাজা কী হবে সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। তবে আইনবিদ শাহদীন মালিক বলেছেন, আইনে না থাকলেও নৈতিকতার কারণেই দুই মন্ত্রীর পদে থাকা উচিত নয়। আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পরই তাদেরকে নিজে থেকেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল বলেও মনে করেন শাহদীন মালিক।
তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন ‘উচ্চ আদালতের রায়ের পরও তাঁদের (কামরুল ও মোজাম্মেল) মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার দরকার নেই। কারণ, শপথ ভঙ্গের কারণে মন্ত্রিত্ব থাকবে না, এমন কথা আদালতের আদেশে বলা হয়নি।’