বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে কর্মী নেয়ার বিষয়টি জানিয়েছে অবশেষে শুধু বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য খুলেছে মালয়েশিয়ার দোয়ার। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) মালয়েশিয়ার সরকার । ঈদের পরই কর্মী পাঠানোর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ সরকার।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকায় মালয়েশীয় হাইকমিশন থেকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিতে আগ্রহী। কনস্ট্রাকশন, প্লান্টেশন ও ম্যানুফেকচারিং- এই তিন খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে দেশটি। বিদেশে থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে সূত্র জানায়। ঈদের পরই কর্মী পাঠানোর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি দুই পর্যায়েই কর্মী যেতে পারবেন মালয়েশিয়ায়। তাদের নির্বাচিত করা হবে সরকারের নিবন্ধিত ডাটাবেজ থেকে।
তবে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে কারা কর্মী পাঠাতে পারবে, সেটি ঠিক করবে মালয়েশীয় সরকার। ৭৪৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির নামের যে তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, এদের মধ্য থেকে বাছাই করা হবে কাদের মাধ্যমে কর্মী নেবে দেশটি। মালয়েশিয়া সরকার যে চাহিদাপত্র পাঠাবে, তাতে কর্মীর সংখ্যার পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সির নামও থাকবে। এরপর মন্ত্রণালয় চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেবে।
মালয়েশিয়া যেতে একজন কর্মীর কত টাকা খরচ হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানায় মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুর রউফ ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘আমরা গতকাল (রবিবার) মালয়েশিয়ার হাইকমিশন থেকে চিঠি পেয়েছি। ওই চিঠিতে জানানো হয় মালয়েশিয়া কর্মী নিতে রাজি হয়েছে। বিদেশি শ্রমিক নেয়ার যে সাময়িক নিষেধজ্ঞা ছিল সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সচিব বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। তবে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে ঈদের পর। আশা করি, মালয়েশিয়া অল্পসময়ের মধ্যে চাহিদাপত্র পাঠাবে এবং দুই-এক মাসের মধ্যেই কর্মী পাঠানো যাবে।’
মালয়েশিয়া যেতে একজন কর্মীর কত খরচ হবে জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব বলেন, ‘সেটি এখনো ঠিক হয়নি। মালয়েশিয়া তাদের খরচের বিষয়টি ঠিক করবে। তারপর বলা যাবে উভয় দেশের খরচ মিলিয়ে একজন কর্মীর পেছনে কত ব্যয় হবে, আর কর্মীকে কত টাকা বহন করতে হবে। এর মধ্যে নিয়োগকর্তা কত বহন করবে সেটিও দেখার বিষয় আছে। সবকিছু ঠিক হবে মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর।’
কয়েক বছর ধরে একের পর এক ঘোষণা দিয়েও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো যায়নি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। তিন বছর পর ২০১২ সালে সরকারিভাবে (জিটুজি পদ্ধতি) কর্মী পাঠাতে দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। জনপ্রতি ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা অভিবাসন ব্যয়ে বৃক্ষরোপণ খাতে পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন বছরে গেছেন মাত্র ৯ হাজার।
জিটুজির ব্যর্থতায় গত বছরের জুনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় (বিটুবি পদ্ধতি) কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর দুই মাস পর মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরে ঘোষণা করা হয়, বিটুবি নয়, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে। এ পদ্ধতিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিও কর্মী পাঠাবে। তখন সরকার জানায়, মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ কর্মী পাঠানো হবে।
এ পদ্ধতিতে কর্মী নিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসে সমঝোতা স্মারক সই করেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পরদিনই মালয়েশিয়ার সরকার জানায়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশটিতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ থাকবে। আগে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়া হবে। পরে চাহিদার ভিত্তিতে নতুন বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হবে।
প্রায় ছয় মাস পর বাংলাদেশের ওপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল মালয়েশিয়া। আর এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর পথ আবার খুলল।