বাংলাদেশ  নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সামিনা মেহতাবকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ওই প্রতিবাদ জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুল আহসান তার দপ্তরে হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন। সেখানে মৌখিকভাবে পাকিস্তানকে সতর্ক করা ছাড়াও লিখিত প্রতিবাদপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব। মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মনোয়ার হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিনা বাক্যে পাকিস্তান দূত বেরিয়ে যাওয়ার পর কামরুল আহসান উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বলেন, মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান যে মতামত দিয়েছে সেটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ বিচারটি শেষ হয়েছে। এটি সবার কাছে উন্মুক্ত ছিল। ওই বিচারের পর উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ ছিল, যা তিনি (মীর কাসেম) গ্রহণ করেছেন। ’৭১ সালে জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি যে অপরাধ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত তার প্রাপ্য শাস্তি মনে করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। কাজেই এ নিয়ে পাকিস্তানের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। শনিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপরই এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া জানান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসলামাবাদ থেকে ওয়েবসাইটে প্রচারিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের আগে সংঘটিত ‘কথিত’ অপরাধের অভিযোগে ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’ প্রক্রিয়ায় মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় পাকিস্তান গভীরভাবে মর্মাহত। সেখানে মীর কাসেমের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানায় পাকিস্তান। মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমসহ এ পর্যন্ত  ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। প্রত্যেক অপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের কাছ থেকে অযাচিত এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া এসেছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ছে। দুই দেশের কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি তলব ও প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটেছে। পাকিস্তানের এমন আচরণকে ‘ধৃষ্টতা’ আখ্যায়িত করে তা থেকে তাদের বিরত থাকতে বারবারই আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল পাকিস্তান দূতকে বাংলাদেশ কিছু বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে মনে করিয়ে দেয়। সেখানে বলা হয় পাকিস্তান অযাচিত ওই হস্তক্ষেপ মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধেই কেবল নয়, এটি বাংলাদেশের আপামর জনগণের স্বাধীনতার চেতনাকে অসম্মান করার শামিল। বাংলাদেশ ৪৫ বছর আগে সংঘটিত অপরাধের দায় মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে প্রতিবাদ পত্রে বলা হয়- পাকিস্তান বরাবই ত্রিদেশীয় চুক্তির অপব্যাখ্যা করে চলেছে। যা নিন্দনীয়। ওই চুক্তিতে দেশীয় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের (মাস্টারমাইন্ড) বিচারের কোনো বাধা নেই। চুয়াত্তরে চুক্তিটি করা হয়েছিল বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি সু-প্রতিবেশীসুলভ পরিবেশ সৃষ্টি এবং এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, অংশগ্রহণমূলক সমৃদ্ধির জন্য।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031