চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে আইনের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একটি চক্র রাতের অন্ধকারে পুকুর ভরাট করলেও নীরব ভূমিকায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। এই চক্রটি প্রায় ২৫-৩০ টি ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করে বালি দিয়ে পুকুরটি ভরাট করতেছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাহাত্তারপুলের পূর্ব পাশে পূর্ব ষোলশহর কে.বি আমান আলী রোডস্থ পুলিশ বীট সংলগ্ন বানুর বাপের বাড়ীর সুবিশাল পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। যেই পুকুরটি একসময় এলাকাবাসীর ব্যবহারের একমাত্র মাধ্যম ছিলো। কয়েকবছর আগে থেকে পুকুরটির মালিকরা ভরাটের উদ্দেশ্যে সংস্কার না করে উল্টো ময়ল-আবর্জনা ফেলে ব্যবহার অনুপযোগী করে দেয়। পুকুর পাড়ের টিনের বেড়ার সাথে ঝুলানো সাইনবোর্ডে খরিদা সূত্রে মালিক হিসেবে বেলাল উদ্দীন, দিদারুল আলম, মামুনুর রশিদ এবং মুমিনুল ইসলামের নাম দেখা গেলেও প্রায় ১০ কাঠার এই পুকুরটি ভরাটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিন্নত আলী বাড়ীর জাশেদ নামে এক ডেনমার্ক প্রবাসী।

রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সাথে আরো ৮-১০ জন লোক নিয়ে এসে বলেন এই পুকুরটির অর্ধেক অংশ তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। এই পুকুরটি ভরাট করে সেখানে ভবন নির্মাণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার নেই। তথ্য সচিব আবুল কালাম মো: শামসুদ্দিন তার খালাতো ভাইয়ের আত্মীয়, তিনি আপনাদেরকে ফোন দিলে বুঝবেন খেলা। এই নামে তথ্য সচিব নেই বলে জানালে জাশেদ মুঠোফোনে তার পরিচিত এক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানান তার ভুল হয়েছে তিনি পিআইবির ডিজি। তখন সাংবাদিকরা বলেন, তিনি বর্তমানে দায়িত্বে নেই সাবেক ডিজি। এমন মন্তব্যে জাশেদ উত্তেজিত হয়ে বলেন যা খুশি করেন, নিউজ করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরকে আমি ম্যানেজ করবো।

পুকুর ভরাটের পেছনে যে যুক্তিগুলো জাশেদ দিয়েছে তা হলো ‘এটি পরিত্যক্ত পুকুর।’ যেন পরিত্যক্ত পুকুর ভরাট আইনের আওতায় পড়ে না, পরিত্যক্ত পুকুর ভরাট করাটা আইনী কাজ।

‘বাংলাদেশ জলাধার সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ’-এ পরিষ্কার বলা আছে, ‘অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাবে না।’

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী, ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ক্রয়সূত্রে মালিকদের মধ্যে মো: মুমিনুল ইসলাম নামে একজন বলেন, পুকুরটির মূল মালিক জাশেদ গং। তাদের নিকট থেকে আমরা ৪ কাঠা ক্রয় করেছি। নাল জমির বাজার মূল্য দিয়ে আমরা উক্ত জমি ক্রয় করেছি। ভরাট করে দেওয়া এবং সিডিএ প্ল্যান নিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। এসব বাস্তবায়ন করতে না পারলে তারা টাকা ফেরত দিবেন।

কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, জাশেদ গং আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং খুবই উশৃংখল প্রকৃতির লোক। তারা এলাকাবাসীর কোন মতামতকে সমর্থন কিংবা পাত্তা দেন না। এই পুকুরটি এলাকাবাসীর অনেক উপকারে এসেছে। বড় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড নির্বাপনে এই পুকুরটির ভুমিকা অপরিসীম। তাদের মালিকানাধীন পুকুর তারা ভরাট করতেছে সেখানে আমাদের তো বাঁধা দেওয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে পুকুরটি রক্ষা করা যেতো।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহানগর পরিচালক সোনিয়া সোলতানা বলেন, পুকুর ভরাটের কোন সুযোগ নেই। সরেজমিনে তদন্ত করে উক্ত পুকুর ভরাটে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো

জিয়াউল হক জিয়া

Share Now
April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930