এখন আপিল বিভাগে বিচারের অপেক্ষায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এখন পর্যন্ত জামায়াতের পাঁচজন শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। আরও দুই মামলা । মানবতাবিরোধী অপরাধীর প্রতিটি রায় কার্যকর হওয়ার আগে ও পরে জামায়াত-শিবির তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী এই শক্তিটি আইনের প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করার পরও এই বিচারব্যবস্থাকে ‘রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা’ হিসেবে দেখছে। রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির হরতালও ঘোষণা করেছে। অবশ্য হরতালে কোনোবারই সাড়া মেলেনি।
সবশেষ শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর সেই একই ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতের পাশাপাশি ছাত্রশিবির। বিচারব্যবস্থার মধ্যে থেকে আইনের প্রতিটি সুবিধা নেয়ার পরও তাদের এই ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এই ধরনের বক্তব্য সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল। তাদের এই বক্তব্য নিয়ে আমার কাছে কোনো নোটিশ এলে অবশ্যই আমি আদালতে আবেদন করবো।’
এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের মধ্যে ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলীর। এছাড়া জামায়াতের বাইরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। শুনানি চলাকালে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে।
সবশেষ উচ্চ আদালতের রায়ে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শনিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়।ওই রাতেই গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এর প্রতিবাদে সোমবার আধাবেলা হরতাল এবং রবিবার দোয়া দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াত।
একইসঙ্গে বিবৃতিতে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মীর কাসেম আলীকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় দণ্ডিত করে সরকার ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে হত্যা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাসেম আলীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
অন্যদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, মীর কাসেম আলীকে হত্যার মধ্যদিয়ে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করলো।
এতে আরও বলা হয়, আইন-আদালত চিরদিন ফ্যাসিবাদীদের অবৈধ দখলে থাকবে না। যে মাটিতে মীর কাসেম আলীর রক্ত ঝরানো হয়েছে সেই মাটিতেই সময়ের ব্যবধানে বিচারের নামে হত্যাকারীদের বিচার হবে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের এই ধরনের বক্তব্য সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল। মীর কাসেম আলী আইনের শেষ ধাপ রিভিউ পর্যন্ত আদালতে শুনানি করেছেন। আদালতের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তাই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা অবমাননার শামিল।’
এ নিয়ে গণজাগরণ (একাংশ) মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখানো ও ধৃষ্টতামূলক। এটা অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল। এই দলটি সবসময়ই এই কাজ করেছে। দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং দেশের আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের বেলায় স্বাধীনতাবিরোধী চিহিৃত এই গোষ্ঠীটি সিদ্ধহস্ত। এই দলটিকে নিষিদ্ধ করার মধ্যদিয়েই এর পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।’