তিন দফা পিছিয়ে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ব্যস্ততা বাড়ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে।
২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন দলটির। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে সম্মেলনের তারিখ ২৮ মার্চ নির্ধারণ করে কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়।
এরপর আরও দুবার পেছানো হয় সম্মেলনের তারিখ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৮ মার্চ তারিখ পরিবর্তন করে ১০ ও ১১ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর গত ১১ এপ্রিল দলের সাধারণ সম্পাদক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও ১১টি উপপরিষদ ঘোষণা করেন। কিন্তু ১১ জুন দলের আরেকটি কার্যনির্বাহী বৈঠকে ঈদ, পূজা, আগস্ট ও আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে তৃতীয় দফায় সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়।
এরই মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতির ১১টি উপকমিটি একাধিক বৈঠক করে নিজেদের প্রাথমিক কার্যক্রম নির্ধারণ করেছে।
সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দুটি সেমিনার করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আরেকটি সেমিনার করার কথা রয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে দুটি পোস্টার ও ব্যানারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্যসচিব হাছান মাহমুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্মেলনের প্রচার ও প্রকাশনা নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলনের বিগত তারিখেই আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখন আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে।’
গঠনতন্ত্র উপকমিটির সদস্যসচিব আফজাল হোসেন জানান, ‘শোকের মাস আগস্ট গেল। এখন আমরা সম্মেলন প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করব। আগামী ৪ তারিখ উপকমিটির বৈঠকে আলোচনা করে ৬ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। আগের দুটি বৈঠকের পর গঠনতন্ত্রের ওপর প্রস্তাব চেয়ে সবাইকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
ঘোষণাপত্র তৈরি
২০৪১ সালের উন্নত-আধুনিক বাংলাদেশ ও ২০২১ সালের মধ্যে ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া ভিশন অনুযায়ী সম্মেলনের ঘোষণাপত্র তৈরি করছে ঘোষণাপত্র উপ কমিটি।
অভ্যর্থনা উপকমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি অতিথিদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে ঈদের পর থেকে যোগাযোগ করা হবে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান, যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ এবং লেবার পার্টি এবং বিশ্বের কিছু প্রচীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। চীনের ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও ভারতের কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন দল সম্মেলনে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গঠনের লক্ষ্য সার্কভুক্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। চলতি মাসেই ই-মেইল ও ফোনে দাওয়াত দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ডেলিগেটদের অভ্যর্থনার বিষয়েও প্রাথমিক কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডেলিগেটদের রাজধানীর প্রবেশদ্বারে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো এবং কমিটির কোন সদস্য কোন প্রবেশদ্বারে থাকবেন তা নির্ধারণ করা। অভ্যর্থনা কমিটির আগামী বৈঠকে দায়িত্ব বণ্টন করা হতে পারে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্যসচিব দীপু মনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্মেলন সফল করতে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারপ্রধানের কাছে আমাদের দাওয়াত পৌঁছানো হয়েছে। আশা করি আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়েই আমরা নিশ্চিত করতে পারব কোন কোন দেশ থেকে অতিথি আসবেন।’
আয়-ব্যয়ের বিবরণী তৈরি
এরই মধ্যে দলের আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও বার্ষিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে অর্থ উপকমিটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও অর্থ উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফরউল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের শোকের মাস শেষ হয়েছে। তাই তেমন কর্মকাণ্ড হয়নি। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর আমাদের কার্যনির্বাহী বৈঠকে সম্মেলনের দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।’
সম্মেলনকে ঘিরে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা দূর করা ও সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপকমিটি। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি। কমিটির সদস্যরা জানান, বরাবরের মতো এবারও সম্মেলনের মঞ্চ হবে নৌকা আকৃতির। এ ছাড়া ব্যানার-ফেস্টুনে দল ও সরকারের অর্জনও প্রচার করা হবে।
আপ্যায়নে থাকছে রসনা বিলাস
সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি, কাউন্সিলার, ডেলিগেটসহ সবাইকে মোরগ পোলাও দিয়ে আপ্যায়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত খাদ্য উপকমিটির। সম্মেলনস্থল, ঢাকার প্রবেশমুখ, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, সায়েদাবাদ-গাবতলী-মহাখালীসহ বাস টার্মিনালগুলোতে মেডিকেল টিম রাখার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য উপকমিটির।
থিম সং লিখবেন সৈয়দ হক
সাংস্কৃতিক উপকমিটি সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের ‘থিম সং’ লেখার জন্য সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তার অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আরও কিছু বিকল্প রাখা হয়েছেও বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জেলা সম্মেলন ও জেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়ে যাবে। জাতীয় সম্মেলনের আগে সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জেলা কমিটিগুলোর অনুমোদন দেয়া হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় সমাপ্ত। বাকি কাজ ঈদের পর শুরু হবে।