গত দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় এসব কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে কর্মরত চার শতাধিক কর্মচারীর ঈদ আনন্দ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঈদের আগে বেতন-ভাতা দেয়াতো দূরের কথা উল্টো তাদের নির্ধারিত বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত জুলাইয়ে দায়িত্ব নেয়া নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।

বেতন-ভাতা না পাওয়া ও সেতুতে কর্মরত স্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার পরামর্শে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনমুখী হচ্ছেন কর্মচারীরা। এর প্রতিবাদে গত শনিবার সেতু এলাকায় বিক্ষোভও করেছেন তারা।দিন যতই গড়াচ্ছে কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ততই বাড়ছে। এসব সমস্যার নিরসন না হলে বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন তারা।

জানা যায়, জুলাই থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। এর আগের এক বছর টোল আদায় থেকে শুরু করে সেতুর সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কর্মচারীদের দেয়া হয়নি বেতন। আসছে ঈদে বেতন-বোনাস পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে সেতুতে কর্মরত কর্মচারীরা।

কয়েকজন কর্মচারী জানান, নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগের বেতন পরিশোধ না করে উল্টো বিবিএ কর্তৃক নির্ধারিত তাদের সর্বনিম্ন বেতন ১০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৬ হাজার ৫০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা। এর প্রতিবাদে কর্মচারীরা গত শনিবার দুপুর দুইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত সেতুতে কর্মরত কর্মকর্তাদের দুপুর দুইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াসীম আলী বেতন না কমানোর প্রতিশ্রতি দিলে কর্মচারীরা বিক্ষোভ বন্ধ করে।

কর্মচারীদের অভিযোগ, আমরা দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা ও এক মাসের প্রজেক্ট বোনাস পাইনি। ঈদ কিভাবে কাটাবো এ নিয়ে টেনশনে আছি। তার ওপর চায়না কমিউনিকেশন এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন, সেতু রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম রতন ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা সেলিম রেজা শনিবার সকালে ওয়ারলেসের মাধ্যমে কর্মরত সিকিউরিটিসহ সকল কর্মচারীদের অফিসে তলবের নির্দেশ দেন। ওইদিন বিকালে কর্মচারীরা অফিসে গেলে তাদের বেতন অর্ধেক করা হবে বলে জানানো হয়। কারণ জিজ্ঞাস করায় তাদের চাকুরিচ্যুতির হুমকি দেয়া হয়। এ সময় কর্মচারীরা অফিস বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকাতে আন্দোলন শুরু করে। পরে ওই তিন কর্মকর্তাকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানান, কয়েকজন কর্মকর্তা লক্ষাধিক টাকা করে বেতন তুললেও আমাদের বেতন-ভাতা না দিতে কর্তৃপক্ষকে কুপরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া উল্টো আরও বেতন কমানোরও পরামর্শ দিচ্ছেন। ঈদের আগে আমাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও পরামর্শদাতা তিন কর্মকর্তা- নাসির, রতন ও সেলিমকে চাকুরিচ্যুত না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

কিন্তু কর্মচারীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও তা নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম রতন এবং সেলিম রেজা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াসীম আলী বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সেতুতে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত জানালে তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বেতন না কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলে তারা শান্ত হন। তবে বয়েকা বেতন পরিশোধের ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031