নতুন করে জায়গা পাওয়া সাত প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে চট্টগ্রাম পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় । গতকাল শপথ নেয়া এ সাত প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে সংরিক্ষত নারী আসন থেকে পরপর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই মন্ত্রণালয়ের দুই প্রতিমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও চন্দনাইশ।
ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি এবং আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবরটি গতকাল চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে দিনব্যাপী আনোয়ারা ও চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের মাঝে খুশির বন্যা বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থ প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় তাঁর গ্রামের বাড়ি আনোয়ারার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী এই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে (স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম থেকে কোনো মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ছিলেন না) যুক্ত হলেন কোনো নারী। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। তিনি হলেন চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক এমএনএ ও রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আমৃত্যু প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বঙ্গভবনে চট্টগ্রামের দুই প্রতিমন্ত্রীসহ নতুন সাত প্রতিমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। শপথ গ্রহণের পর রাতে মন্ত্রিপরিষদের সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করা ওয়াসিকা আয়শা খান ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আতাউর রহমান খান কায়সার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ।
ওয়াসিকা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক হন। বর্তমানে চিটাগাং আর্টস কমপ্লেঙের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য ওকালতি করা ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ নামক নেটওয়ার্কের ভাইস চেয়ারপারসনের দায়িত্বও পালন করেছেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ওয়াসিকা আয়শা খান ২০২১ সালের জুনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হন।
উত্তর চট্টগ্রামের ইতিহাসে প্রায় সময় একের অধিক মন্ত্রী থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে ছিলেন একমাত্র আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি একবার ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং গতবার ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এবার আনোয়ারার ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে যুক্ত হলেন চন্দনাইশের নজরুল ইসলাম চৌধুরীও।
চন্দনাইশ–সাতকানিয়া (আংশিক) থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী হলেন মন্ত্রিসভায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের নতুন চমক। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবরটি প্রচার হওয়ার পর চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে খুশির জোয়ার বইতে শুরু করে। তাঁকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ৯৬’র মন্ত্রিসভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ছিলেন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মান্নান।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়া অপর ৫ প্রতিমন্ত্রী হলেন–
মো. শহীদুজ্জামান সরকারকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মো. আব্দুল ওয়াদুদকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বেগম রোকেয়া সুলতানাকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বেগম শামসুন নাহারকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বেগম নাহিদ ইজাহার খানকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
নতুন প্রতিমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া : শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী এক প্রতিক্রিয়ায় আজাদীকে বলেন, আমি প্রথমত মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। এরপর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞা জানাই–আমার ওপর আস্থা রেখে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন আমি আমার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো।
আমি আমার সারাজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দলের জন্য কাজ করেছি। নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি) আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন–আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি আমার প্রিয় চন্দনাইশ–সাতকানিয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে।
প্রধানমন্ত্রী আমাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল দক্ষ নেতৃত্বের কারণে দেশের কর্মসংস্থান, শ্রমবাজার, শ্রমজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য কমানোর লক্ষ্যে কাজ করবো।