৩ দিন পর যখন লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তখন পুলিশ এসে দফারফা করে। ৬০ লাখ টাকায় আশ্বাসে অবশেষে পুলিশ ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সহায়তায় লাশ দাফন করা হয়। এই ঘটনাকে স্থানীরা অমানবিক বলে বর্ণনা করেন৩ দিন পর যখন লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তখন পুলিশ এসে দফারফা করে,তারা জানান ।
জানা যায়, মোতাহার হোসেন মুন্সী। বাড়ি গাইবান্ধায জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে। অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করতেন ঢাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, মৃত্যুর পর টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিন দিন বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল তার মরদেহ। তিন দিন পর পুলিশের হস্তক্ষেপে অবশেষে ৭৫ বছর বছর বয়সী মোতাহার হোসেন মুন্সির দাফন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে পুলিশি হস্তক্ষেপে মরদেহটি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মোতাহার হোসেন মুন্সী বেশ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যান। স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নিয়ে ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায় থাকতেন। ব্যক্তি জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন তিনি।
কিছুদিন আগে মোতাহার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন পড়ে। তাই ঢাকায় থাকা একখণ্ড জমি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
গত এক সপ্তাহ আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
পরদিন মরদেহ দাফনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে পলাশবাড়ী উপজেলার শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে আনেন তার স্ত্রী মাসুমা বেগম।
কিন্তু মরদেহ দাফনে বাধা দেন মোতাহার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। জমি বিক্রির ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা কোথায় কোন ব্যাংকে আছে তা জানতে চান ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সী, ভাতিজা হাবিবসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
এক পর্যায়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।মরদেহ বাড়ির উঠানে পড়ে থাকে। চেষ্টা করেও দ্বন্দ্বের নিরসন করতে পারেননি স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মরদেহ দাফন না হওয়ার ঘটনা জানতে পারেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পলাশবাড়ী থানা পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমঝোতা করেন। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে নিজ বাড়ির উঠানে জানাজা নামাজ শেষে মোতাহার আলীর মরদেহ পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, নিঃসন্তান মোতাহার আলীর ভাই-ভাতিজারা মরদেহ দাফনে আপত্তি জানালে বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল। দেনাপাওনা এবং সম্পদ বিক্রির দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে তার স্ত্রী মাসুমা বেগমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তার পরিবারের লোকজন। উভয়কে নিয়ে পারিবারিকভাবে দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। মোতাহার আলীর স্ত্রী মাসুমা বেগম তার ভাই-ভাতিজাদের ৬০ লাখ টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছেন।
পলাশবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ জানান, দ্বন্দ্বের জেরে তিন দিনেও মরদেহ দাফন হয়নি এমন খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। দুই পক্ষকে বুঝিয়ে দ্বন্দ্বের সমঝোতা করে মৃত মোতাহার হোসেন মুন্সির দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।