বিএনপি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সংঘাত সহিংসতায় নেতাকর্মীদের না জড়াতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে । সহিংস কোনো কর্মকাণ্ডে দলের কোনো নেতাকর্মী জড়ালে এর কোনো দায়িত্ব দল নেবে না বলে বার্তাও দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিনে হরতালের কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি এর সমর্থনে এদিন নেতাকর্মীদের মাঠে না নামানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচন বর্জনের জোরালো বার্তা নিয়ে সারাদেশে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে বিএনপি।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আভাস দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথে থেকে বুলেট ও গ্রেনেড মোকাবেলা করবে। শান্তিভঙ্গ করবে না। এই সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য ইনশাআল্লাহ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল এবং ১২ দফায় ২৪ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে বিএনপি। এরপর ভোট ঠেকাতে জনগণকে ভোট বর্জনের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। যদিও অসহযোগ আন্দোলনের কার্যকারিতা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরপরেও জনগণকে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করতে সারা দেশে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি।

জানা গেছে, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোট বর্জনের আহ্বানে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল কিংবা পেশাজীবীদের ব্যানারে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের। বিকল্প হিসেবে গণসংযোগ কর্মসূচির বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলে শুক্রবার সকাল ৮টায় সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় শেষ হওয়ায় এই কর্মসূচি করতে পারা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের। অবশ্য ৭ জানুয়ারি ভোট এবং আগের দিন হরতাল দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু ভোটের দিনও হরতাল দেওয়া হতে পারে। তবে এই কর্মসূচিও ভোট বর্জনের আহ্বান এবং একদফা দাবিতে দেওয়া হবে। সরকারি কোনো উসকানিকে পা না দিয়ে এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে তৃণমূলে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এ নেতা জানান, সম্প্রতি দেওয়া ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের একটি বক্তব্যকে আমলে নিয়েছে বিএনপি। দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম মনে করছে, এটি নির্বাচন ঘিরে বিএনপিকে নতুন করে ফাঁদে ফেলার একটি প্রচেষ্টা। সে কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকা এবং সরকারি কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে সংযত থাকতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়াতে ইতোমধ্যে দলটির তৃণমূলে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনের নামে যে তামাশা, নাটক চলছে- জনগণ সে ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। ফলে তারা নির্বাচন বয়কটের যে আহ্বান জানিয়েছে জনগণ সেটাতে সাড়া দেবে এবং ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা প্রকাশ করবে।

রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান এবং অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ ও স্টিকার লাগানো অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ। পাশাপাশি আবারও নতুনভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান পথচারী, যানবাহনে থাকা সাধারণ যাত্রী ও ফুটপাতের হকারদের হাতে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, কৃষকদলের জামাল উদ্দিন খান মিলন, ভিপি ইব্রাহিম, ফেরদৌস পাটোয়ারি, মিজানুর রহমান লিটু, ওবায়দুর রহমান টিপুসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ‘ভুয়া-ধাপ্পাবাজি’ নির্বাচন করে সরকার টিকে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে ২০২৪ সাল আর ২০১৪ সাল এক নয়। সরকার যদি ভাবে একটি ‘ভুয়া-ধাপ্পাবাজি’র ভোট করে তারা আবার ৫ বছরের জন্য নিশ্চিত করে নেবে, এটা কোনোদিন হবে না।

মতিঝিলের এজিবি কলোনি বাজারে দোকানদার ও ক্রেতাদের হাতে ভোট বর্জন সংবলিত লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, এই নির্বাচন জনগণের নির্বাচন নয়, এই নির্বাচন লীগের নির্বাচন, এই নির্বাচন অবৈধ ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার নির্বাচন। একতরফা ডামি নির্বাচনকে ‘না’ বলুন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, ডা. পারভেজ রেজা কাকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সেগুনবাগিচা এলাকায় প্রকৌশলীদের সংগঠন এ্যাব’র উদ্যোগে লিফলেট বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী নেতা রুহুল আমিন গাজী, কাদের গণি চৌধুরী, অ্যাব’র রিয়াজুল ইসলাম রিজু, আলমগীর হাছিন আহমেদ, একেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ। তাছাড়া পুরান ঢাকার নবাবপুরে মৎস্যজীবী দল, পুরানা পল্টনে যুবদল, হাতিরপুলে স্বেচ্ছাসেবক দল, গ্রিন রোডে ছাত্রদল লিফলেট বিতরণ করেছে।

জামায়াতের লিফলেট বিতরণ ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুর, কাজীপাড়া, আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেইট, ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে শাহবাগ, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কোনাপাড়া, মতিঝিল, শ্যামপুর, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মুগদা, পল্টন, খিলগাঁও সবুজবাগ, বংশাল, রমনা, কোতোয়ালি, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ধানমণ্ডি, কদমতলী, সূত্রাপুর, চকবাজার, লালবাগ, গেন্ডারিয়া থানায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031