রাজনীতি দীর্ঘ তিন মাস পর দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে রাজপথে ফিরেছে । দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার বিষয়টির সুরাহা হলেও ক্ষমতাসীনরা তা ধরে রাখতে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে দ্রুত সময়ে আরেকটি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপিরও। নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো শনিবার রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করার পর পরবর্তী সময়েও রাজপথ দখলে দুই দল মরিয়া থাকবে এমন আভাসও দিয়েছে। বিএনপি ৩০ জানুয়ারি আবারও কালো পতাকা নিয়ে মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। একই দিনে ক্ষমতাসীনরাও মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন দলের সূত্রে জানা গেছে- নির্বাচন হয়ে গেছে, পুরো ৫ বছরের জন্য দল আবারও ক্ষমতায় এসেছে, এখন আর বিএনপির সঙ্গে রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কোনো প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্ন আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। দলের সিনিয়র নেতারা এর জবাবে রাজপথে থাকার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করে নেতাকর্মীদের বলেছেন, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা তাদের দলের নেতাদের নেতৃত্বকে ব্যর্থ মনে করছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এই নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করে মাঠে নামানো অনেক কঠিন হবে। ফলে বিএনপি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বিদেশিদের যোগসাজশে কীভাবে সরকার পতন ঘটানো যায় সেই চেষ্টায় আছেন। যে কোনো সময় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে। এই দলগুলো যদি নাশকতার চেষ্টা চালায় তাহলে দলগুলোর কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যারা এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগের মতোই কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। এসব কারণে বিরোধীদলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকতে হবে।
এরই মধ্যে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচি সহিংসতার দিকে এগোনোর সন্দেহের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সম্প্রতি দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখন যে সহিংসতা বন্ধ আছে, এটাকে স্থায়ী বলা যায় না। এখন হয়তো তারা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে, বাইরে কথা বলছে। তারা শক্তি সঞ্চয় করছে বড় ধরনের সহিংসতার।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু কর্মসূচির নামে জনজীবন বাধাগ্রস্ত করলে তা মানবে না ক্ষমতাসীনরা। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেন আগের মতোই কঠোর পদক্ষেপ নেয় সে তাগিদ দেবে আওয়ামী লীগ। দলের নেতাকর্মীরাও যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে মাঠে থাকবেন।
এদিকে বিএনপি নেতারা জানান, দীর্ঘ আড়াই মাসের আন্দোলনে তাদের অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটা পরিবর্তনের আশায় তারা সর্বোচ্চ ভূমিকা নিয়ে আন্দোলন করলেও সেই ফসল তারা ঘরে তুলতে পারেননি বলে আশাহত দলটির নেতাকর্মীরা। বিগত ১৭ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা আজ নিঃস্ব। মামলা-হামলায় জর্জরিত প্রত্যেক নেতাকর্মীর এখন বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে। আদালত আর কারাগারে দৌড়াতে গিয়ে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন তারা। এর ফলে কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন চরম হতাশা কাজ করছে তেমনি অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দলকে আবারও টেনে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়ে নতুন উদ্যোমে মাঠের আন্দোলনে ফিরতে চান তারা। এরই মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজপথে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির রাজপথের আন্দোলন প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নেতাকর্মীদের ‘রাজপথে’ থেকেই গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে বিজয় আনতে হবে। এজন্য সব নেতাকর্মী আরও সক্রিয় হচ্ছেন।
একই বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি রাজপথে ছিল এবং থাকবে। যতদিন পর্যন্ত না দেশে গণতন্ত্র ফেরে না আসে।