গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল এ কথা। কিন্তু দুই মন্ত্রী আসেননি। কেন আসেননি সেই ব্যাখ্যাও দেননি তারা। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেয়ার কথা ছিল এই দুই মন্ত্রীর।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন মাঠ সংগঠক গোলাম কবির ভূঞার দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের অংশ নেয়ার কথা ছিল। এতে প্রতিবেদক পাঠাতে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ অনুরোধ করে চিঠিও দিয়েছিল গণমাধ্যমকে।
কামরুল ও মোজাম্মেল সংবিধান রক্ষায় শপথ ভঙ্গ করেছেন– সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন কথা বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই রায়ের বিষয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যাবে-ধারণা ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের। তাই বেশ কিছু গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ভিড় করেন এই আলোচনা সভায়। কিন্তু তাদেরকে হতাশ হতে হয়।
আলোচনা শুরুর কথা ছিল সকাল সাড়ে ১০টায়। নির্ধারিত সময়ে শুরুও হয় তা। বেলা সাড়ে ১১টার সময় আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের সভাপতি শাহাদাত হোসেন টয়েন নিশ্চিত করেন, দুই মন্ত্রী আসছেন না।
তারা কি কোনো কারণ জানিয়েছেন?-জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে টয়েন বলেন, ‘আলোচনা সভা অনেকক্ষণ ধরেই হচ্ছে। দেরি হয়ে গেছে, আর কিছু সময় পরে জুমার নামাজ। তাই হয়ত ওনারা আসবেন না।’
এক প্রশ্নের জবাবে টয়েন জানান, গত বুধবার দুই মন্ত্রী তাদেরকে এই আলোচনায় অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন তাকে।
আয়োজক সংগঠনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আপিল বিভাগের রায়ের পর গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন বলেই হয়তো আজ তারা আসেননি।’
অনুষ্ঠানে যাননি কেন, জানতে খাদ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে একজন ফোন ধরে বলেন, ‘স্যার এখন একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত আছে। আপনি পরে ফোন করতে পারেন।’
এদিকে বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে একটি অনলাইন গ্রোসারি শপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। প্রথমে আয়োজকরা তিনি আসবেন বলে জানালেও পরে তারা জানান ‘অনিবার্য কারণে’ মন্ত্রী আসতে পারছেন না। তবে কী সেই কারণ সে সম্পর্কে কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার কামরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেছিলেন, ‘রায়ের কপি আমার হাতে আছে। এতে আমি শপথ ভঙ্গ করেছি এটা তো পাইনি। একজন বিচারক কেবল বলেছেন আমি শপথের বরখেলাপ করেছেন।’
একই দিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, সুপ্রিমকোর্টের রায়ের কপি তিনি দেখেননি। দেখার পর এ বিষয়ে বিবৃতি দেবেন তিনি। তবে সে বিবৃতি এখনও গণমাধ্যমে আসেনি।
কথা দিয়েও রিপোর্টার্স ইউনিটির আলোচনা সভায় কেন উপস্থিত হননি, সে বিষয়ে জানতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি মোজাম্মেল হককেও। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিল রায়ের আগে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে করা মন্তব্যের কারণে দুই মন্ত্রীকে গত ২৭ মার্চ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, আপিল বিভাগের আট বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন মনে করেন, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে মন্ত্রী হিসেবে সংবিধান রক্ষার জন্য নেয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন কামরুল ও মোজাম্মেল।
রায়ে বলা হয়, ‘সংবিধান হিসেবে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।’ আপিল বিভাগের এই রায়ের পর দুই জনের মন্ত্রী পদে থাকার অধিকার আছে কি না, সে নিয়ে কথা উঠেছে।
আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিমকোর্টের এই রায় প্রকাশের পর দুই মন্ত্রীর আর এক মুহূর্ত দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে শপথ ভঙ্গ করলে এর সাজা কী সেটা বলা নেই সংবিধানে। কিন্তু নৈতিক কারণে তাদের পদে থাকা উচিত নয় ‘