একটি খাদ্যপণ্য উৎপাদন কারখানার শ্রমিকরা সরকার ঘোষিত বেতন বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার সকালে বিক্ষোভ শুরু করে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় । এ সময় শ্রমিকরা টাকা – টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে কয়েক শ্রমিক আহত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পৌনে ১০ টা পর্যন্ত চলে আন্দোলন।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭ টায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড—এর শ্রমিকরা কারখানার গেটের সামনে অবস্থান করে সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানান।এ সময় কারখানাটির ভিতরের অবস্থান করা স্টাফ ও শ্রমিকরা বাইরে অবস্থান করা শ্রমিকদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে বাইরে অবস্থান করা শ্রমিক এবং কারখানাটির ভিতরে অবস্থান করা শ্রমিকদের মাঝে পাল্টাপাল্টি ইট পাটকেল নিক্ষেপ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, কারখানার ভিতর থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে ২০—২৫ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
কোকোলা ফুড পোডাক্ট লি. কারখানার শ্রমিক আরাফাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সব কারখানায় শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হলেও আমাদের কারখানায় দিচ্ছে না। আমাদের কারখানার শ্রমিকরা সর্বনিম্ন বেতন পাচ্ছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা।
কারখানা শ্রমিক সানোয়ার হোসেন বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই আমরা সরকার ঘোষিত বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসতেছি, কর্তৃপক্ষ দেই দিচ্ছি বলে সময় নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেই বেতন আমরা পাইনি। যার কারণে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। পরে পুলিশ আমাদের উপর হামলা করে কয়েকজনকে আহত করেছে।
কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। বেশ কয়েকবার আলাপ আলোচনা করে বেতনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বেতন ছিল ৬ হাজার ৭০০ টাকা। তাদের বেতন ১৩০০ টাকা বৃদ্ধি করে এখন ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। শনিবার কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিলো বেতনের বিষয়ে সমাধান হওয়ার পর রোববার থেকে শ্রমিকরা কাজও করছে। কিন্তু সোমবার সকালে বহিরাগত কিছু শ্রমিকদের উস্কানিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে আমাদের কোন শ্রমিক ছিলো না।
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল আলম বলেন, শ্রমিকদের ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা সরে গেলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। কারখানা এলাকায় শিল্প ও থানার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শিল্প পুলিশ গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক মজুমদার জানান, শ্রমিকদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা শোনেনি। মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।