এবার আলোচিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পরিবর্তন এনেছে সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নতুন মন্ত্রিসভায় এবার চট্টগ্রামবাসী পররাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পেয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
ড. হাছান মাহমুদ গত একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় সাফল্যের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। অপরদিকে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একই মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে মন্ত্রিসভার সদস্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভার নতুন সরকারের নতুন ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীও শপথ নেন।
ড. হাছান মাহমুদ এর আগে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব পান। একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। অপরদিকে একই মন্ত্রিসভায় ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এবার তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন–উত্তর নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদ চমৎকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নতুন মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পূর্বে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, অবশ্যই চমৎকার মন্ত্রিপরিষদ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে বিবেচনা করে মন্ত্রিপরিষদ সাজিয়েছেন। সত্যিই চমৎকার মন্ত্রিপরিষদ হয়েছে। মন্ত্রী হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার, পরিবেশ ও বন এবং এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ড. হাছান মাহমুদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটি আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। গতবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেটি আমি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করেছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আজাদীকে বলেন, আমি প্রথমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার জন্য। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করব। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। পূর্বের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানেও আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। শিক্ষার যে কাজগুলো চলমান আছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য কাজ করবো। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেই ব্যবস্থা করবো। আমি এখানেও এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করা শিক্ষমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম–৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বছর ৭ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। একই দিন রাতে পান মন্ত্রী হওয়ার ডাকও। শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
এদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এর আগে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বীর বাহাদুর উশৈসিং। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটা অনেক বড় দায়িত্ব ও সম্মানের বিষয়। আমার উপর আস্থা রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার ব্যক্তিগত ও সংসদীয় এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে সীমাহীন কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে পালন করে যাব। তিনি বলেন, পাহাড়ে এখনও নানামুখী সংকট। আমি সেসব সংকট দূর করে পাহাড়ি জনপদকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাবো এবং একটি উন্নত জীবন দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।