দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা ঘোষণা ছাড়াই । ফলে শুক্রবার রাজধানীর বাজারে আগের রেটের বোতলজাত তেল ক্রেতাকে কিনতে হয়েছে বাড়তি দামে। তবে সরবরাহ না থাকায় বাড়তি দাম দিয়েও চিনি কিনতে পারেননি ক্রেতারা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতে বেড়েছে সবজির দাম। ফিডের বাড়তি দামের উত্তাপ দেখা গেছে সোনালি মুরগিতে। এছাড়াও গত সপ্তাহের বাড়তি দাম অব্যাহতি রয়েছে সব ধরনের আমদানি পণ্যে।

মূলত গত বুধবার থেকেই রাজধানীর বাজারে বাড়তি রয়েছে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম। এটি সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও এর আগে অক্টোবরের শেষ দিকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। জানা গেছে, আমদানি পণ্য জানুয়ারির আগে সরবরাহ পাওয়া যাবে না, তাই এখনি দাম বাড়াতে চায় না সরকার। এছাড়া নির্বাচনের আগে সব ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনো পণ্যেরই দাম না বাড়ানোর নির্দেশনাও রয়েছে সরকারের।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়। এর পর থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৯, পাঁচ লিটার ৮২৫ এবং খোলা পামঅয়েল ১২৪ টাকা দরে বিক্রি হয়ে আসছে। তবে বুধবার থেকে বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক লিটারের বোতল সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়, দুই লিটারের বোতল ৩৪৬, ৩ লিটার ৫২০ ও ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা দরে। তবে বোতলে গায়ে এখনো আগের রেটই রয়েছে। কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও ডলার সংকটে খরচ বেড়ে গেছে। ৪ টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়াও ডলারের বর্তমান রেটে এলসি খোলা হলেও ২ মাস পরে এলসি পেমেন্টের সময় যদি ডলার রেট আরও বাড়ে তাহলে প্রতিষ্ঠানের লোকসান কয়েকগুণ বাড়বে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রæপ এ প্রসঙ্গে বলছে, ‘ডলার সংকটে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। চার টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে ১৩-১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। ডলারের দাম না কমলে ভবিষ্যতে আমদানি কমে যেতে পারে।’

অন্যদিকে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের মত হলো ‘দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সে জন্য দাম সমন্বয় করতেই হচ্ছে।’

প্রায় একই অবস্থা চিনির বাজারে। শুক্রবার রাজধানীর বেশির ভাগ খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি করতে দেখা যায়নি। হাতেগোনা দু-একটি দোকানে বিক্রি করলেও হাঁকানো হচ্ছে বেশি দাম। এদিকে বছর জুড়েই নির্ধারিত দামের থেকে বাড়তি দামে ক্রেতাকে চিনি কিনতে হয়েছে। কিন্তু এদিন সরবরাহ না থাকায় দোকানে দোকানে ঘুরতে হয়েছে তাদের।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাজধানীর অনেক পাইকারি বাজারেই চিনির আড়ত বন্ধ ছিল, ফলে অনেক খুচরা ব্যবসায়ী এদিন চিনি সংগ্রহ করতে পারেননি। যাদের আগের কেনা চিনি ছিল, তারাই কেবল বিক্রি করেছেন। ফলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৫-১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকার উপরে। এর আগে নভেম্বরে বাজারে চিনির দাম প্রায় ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হয়েছিল দেড়শ’ টাকার উপর। তবে গত ৩ সপ্তাহ ধরে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

এদিকে চিনির পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। মূলত বর্তমানে বাজারে যে চিনির সরবরাহ রয়েছে তা গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের এলসিতে আসা। এর মজুত প্রায় শেষের দিকে। সে সময় ডলারের রেট ছিল ১১১ টাকা দরে। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ দিকে চিনির চালান আসবে তার এলসি খোলা হয়েছিল অক্টোবরে। সে সময় ডলার রেট ১২৪ টাকায় ছাড়িয়ে যায়। ফলে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ডলারের বাড়তি দামে স্বস্তিতে থাকা পোলট্রিখাতে ফের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় ৩ মাস মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও এদিন সোনালি মুরগির কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা দরে। যা আরও বাড়ার আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা। খামারিরা বলছেন, প্রায় ১ মাস ধরে প্রতিবস্তা ফিডে প্রায় ৩শ’ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে। কিন্তু মুরগির দাম সে অনুপাতে বাড়ানো হয়নি। ফলে শঙ্কা রয়েছে ডিমের বাজার নিয়েও। তবে এদিন প্রতি পিস ডিস ১০ টাকা দরেই বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে যথারীতি চড়াই রয়েছে পেঁয়াজসহ আটা-ময়দা ও মসুর ডালে দাম। তবে নতুন করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি আগামী মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় বাজারে এ পণ্যের সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত বাজারে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ২ কেজির প্যাকেট আটা ১২০ টাকা এবং ময়দা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১শ’ ও ১২০ টাকা দরে। এছাড়াও এদিন খোলা আটা ও ময়দা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ টাকা দরে। এছাড়াও আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকার উপরে।

এদিকে বাজারে নতুন আলু দাম এ সপ্তাহে কিছুটা বেড়ে ৭৫ টাকা এবং পুরানো আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতে শুক্রবার সবজির বাজারে উত্তাপ দেখা গেছে। প্রায় ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বেগুন ৭০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, টমোটো ১শ’ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে আকার ভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, পটল ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। অন্যান্য সবজি আগের দরেই ছিল।
এদিকে মাছ বাজারে মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪শ’, বড় কাতল ৪শ’, বড় পাঙ্গাশ ২শ’, চাষের কই (ছোট) ৩২০, তেলাপিয়া আড়াইশ ও শিং মাছ ৬শ’, শোল মাছ ৮শ’, পাবদা ৫শ’ থেকে ৬শ’, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৬শ’ থেকে ৭শ’, মলা মাছ ৫শ’, বাইলা ১ হাজার, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ’, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ’ থেকে ৬শ’, গুড়ামাছ ৩শ’, ছোট চিংড়ি ৫শ’, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ ও রূপচাঁদা ৯শ’ টাকা দরে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031