গত এক বছরে বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্ত হয়ে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৩২। একই সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪৭ থাকলেও ২০২৩ সালে তা ১২৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার অনুষ্ঠানে এ বছরের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে বুধবার মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এক বছরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর এই সংখ্যাকে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ৩৪ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৪ জন। আর সাড়ে তিন দশকে মৃত্যু হয়েছে ২০৮৬ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ‘বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত এক বছরে আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশি ১১১৮ জন, বাকিরা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা। এক বছরে আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪২ জন রোগী ঢাকার। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ এবং রংপুর জেলায় ৩৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে।

শনাক্তদের মধ্যে ৮৫০ জন পুরুষ; ২৭৮ জন নারী। আর ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর এবং আবদুন নূর তুষার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। তিনি এইডস নির্মূলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে রোগটি যাতে সংক্রমিত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বলেন, ‘এইডস আক্রান্তদের দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ওষুধসহ সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দেখা যাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি যিনি একটি কোলনস্কপি, এন্ডোস্কপি বা যে কোনো এক একটা পরীক্ষা করাতে এসে আক্রান্ত হয়ে গেলেন।’

রোগটি বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘সারা বিশ্বে এখন অবাধ যাতায়াত করছে। ফলে সংক্রামক রোগও দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়।’

মৃত্যুর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য দু’টি কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আগে হয়তো অজ্ঞাত রোগ হিসেবে মারা যেত। এখন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থাকায় রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে, এইডস আক্রান্তের মৃত্যু এইডস হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। আরেকটা হতে পারে বাংলাদেশে যারা এইডস আক্রান্ত তাদের বয়স হয়েছে, তাদের অনেকের ন্যাচারাল ডেথ হচ্ছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরুষ যৌনকর্মীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া পুরুষ সমকামীদের মধ্যেও এই রোগ ছড়াচ্ছে। যারা ইনজেকশন ব্যবহার করে শিরায় মাদক নেন, সেইসব মাদকসেবীরাও এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর) উপদেষ্টা, ডা. আবদুর নুন তুষার বলেন, আমাদের বিজ্ঞাপনে মাদক নেওয়ার সিন দেখানো হয়। এসব না দেখানো উচিত। এসব দেখে অনেকে উৎসাহিত হয় এবং মাদক নেওয়ার কৌশল রপ্ত করে। এইডস নিয়ন্ত্রণ গ্লোবাল এইডস স্ট্র্যাটেজি ২০২১ থেকে ২০২৬ চলমান।

মো. সাইদুর রহমান বলেন, এইডস সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ জানতে পারে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময়। তখন এইডসের পুরো মিনিং জানতে হয়। এছাড়া এইডস নিয়ে আর কোনো প্রচারণা নেই, এটা আমাদের বড় একটা ঘাটতি। দেশের সব হাসপাতালে এইডসের চিকিৎসা নেই, বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালও নেই।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031