ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড এবং আংশিক আকবরশাহ ও পাহাড়তলী) আসনের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য, শিল্পপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমরান বলেছেন, অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সমাজ গড়াই হবে আমার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টে আপিলের মাধ্যমে পাওয়া আমার প্রার্থিতা বাতিলের জন্য সীতাকুণ্ডের এক প্রার্থী লিভ–টু–আপিল করেছিলেন। যদিও মহামান্য আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে আমার প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। সবাই যখন নির্বাচনের প্রচারে আনন্দমুখর পরিবেশে আমরা তখনও প্রার্থিতা বহাল রাখার লড়াইয়ে ব্যস্ত। মহান আল্লাহর প্রতি লাখো কোটি শুকরিয়া, শেষমুহুর্তে হলেও ঈগলের ডানা ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছেন। গতকাল বুধবার সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় বক্তব্য দেন, সীতাকুণ্ড আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আইনুল কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ ইকরাম এবং লায়ন মোহাম্মদ ইমরানের বড় ভাই প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইকবাল, লায়ন মোহাম্মদ ইমরানের পত্নী নারী উদ্যোক্তা লায়ন নিশাত ইমরান, সারতাজ মোহাম্মদ ইমরান, তাহিয়া নিশাত ইমরান, সারফারাজ মোহাম্মদ ইমরান, আমির নেওয়াজ, শিরিন আরা, জেরিন আরা, ফরিদুল আলম ও মোহাম্মদ আলী।
বক্তব্যে লায়ন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আমার লক্ষ্য একটাই। স্লোগানও একটা ‘অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সমাজ গড়ার প্রত্যয়। আমি সীতাকুণ্ডের গৌরবোজ্জ্বল আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। যেহেতু মাননীয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। সেজন্য ঈগল প্রতিক নিয়ে হাজির হয়েছি।
লায়ন মোহাম্মদ ইমরান আরো বলেন, নির্বাচনী পোস্টার–ব্যানার ছাপানোর এবং তা লাগানোর মতো পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ আমাদের হাতে নিতান্তই কম। যে সময়টুকু আছে তাতে করে গণসংযোগ করা, নির্বাচনী এলাকার মানুষের দুয়ারে–দুয়ারে যাওয়া কোনোটার সুযোগ তেমন একটা নেই। তবে আনন্দে মন ভরে যায় যখন এলাকাবাসীরা বলে আপনি সময়ের অভাবে আমাদের সাথে সাক্ষাত করতে না পারলেও আমরা ভোট কেন্দ্রে নির্বিকারে যেতে পারলে এবং ভোট আমাদের আগে অন্য কেউ জালিয়াতি করে দিয়ে না দিলে, আমাদের ভোট আমরা অবশ্যই আপনাকে দিব। আপনি একজন ভাল এবং সাদামনের মানুষ বিধায়। সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাজনীতিবিদ লায়ন মোহাম্মদ ইমরান আরো বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে বৃহৎ পরিসরে তৃণমূলের খেটে–খাওয়া সাধারণ মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হবার বিকল্প নেই। তাই, সীতাকুণ্ডের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসায় আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে এলাকার মানুষের সামনে হাজির হয়েছি। এ সময় লায়ন মোহাম্মদ ইমরান ১৫ দফা সম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
১. সমৃদ্ধ জনপদ সীতাকুণ্ডে অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সংঘবদ্ধ ও একনিষ্ঠ নেতাকর্মীর প্রয়োজন। স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আমার জন্মস্থান এবং আশৈশবের চারণভূমি বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড প্রাচীনকাল থেকে সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল জনপদ। আল্লাহর দয়ায় এখানে ক্ষুধা–মন্দা কিংবা দারিদ্র্যের হাহাকার নেই। ২. আমার প্রথম প্রচেষ্টা হবে সীতাকুণ্ডকে দলীয় কোন্দলের ভয়াবহ বলয় থেকে বের করে আনা। আমি কোন্দল পছন্দ করিনা এবং কোনো প্রকার কোন্দলের সাথে জড়িত নই। সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পেলে সীতাকুণ্ডের সকল নেতা, কর্মী, সমর্থক প্রত্যেকের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করে সবাইকে সাথে নিয়ে দল–মত–নির্বিশেষে সবাই একসাথে মিলে ‘অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সমাজ গড়ার মূলমন্ত্রে সীতাকুণ্ডবাসীর সেবা করবো। ধর্ম–বর্ণ, দল–মত, ধনী–গরীব, শ্রমিক–মালিক ব্যবসায়ী–ভোক্তা, নারী–পুরুষ, ছোট–বড় নির্বিশেষে স্মার্ট সোনার বাংলায় সীতাকুণ্ডের মানুষের সেবাই হবে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। ৩. সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমান্তরালে বিশেষ সিএনজি অটোরিকশা লেইন তৈরি করা। ৪. সীতাকুণ্ডে একটি সরকারি কলেজ (বালক) স্থাপন/ সরকারিকরণের কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া। ৫. পর্যটনশিল্পের প্রসারে গুলিয়াখালী সৈকত, সহস্রধারা ঝর্ণা, চন্দ্রনাথ পাহাড়, ইকোপার্ক, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের যথাযথ উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া। ৬. বর্তমানে সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে সমস্যাগুলোর অন্যতম, বেকারত্ব নিরসনে স্থানীয় তরুণ–তরুণীদের শিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকুরির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ। ৭. অরক্ষিত সমুদ্র উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল জনিত জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৮. জাহাজভাঙা শিল্পের প্রসারে বিশেষ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা। ৯. সীতাকুণ্ডের সবজি সারাদেশের মধ্যে সুস্বাদু। বিশেষত, শীতকালীন শিম, বরবটি, টমেটো অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য তা সোনা ফলা বিবেচিত হতে পারে। এজন্য শীতকালীন সবজি বিশেষ করে টমেটো সংরক্ষণাগার নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ১০. সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেঙকে ১৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১১. পাহাড়কাটা, জমিদখল ও যত্রতত্র কারখানার বর্জ্য অপসারণ রোধকল্পে পর্যাপ্ত ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং যথেষ্ট পরিমাণে ইটিপির ব্যবস্থাকরণ ১২. সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও সলিমপুরে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ১৩. স্টেডিয়াম, শিশুপার্ক ও থিয়েটার ইনস্টিটিউট নির্মাণ, ১৪. ২৫৬ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচারাস্তা পাকাকরণ। ১৫. চট্টগ্রাম–সীতাকুণ্ড বিকল্প সড়ক হাবিব রোডের মানোন্নয়ন।