নির্বাচনের ট্রেন থামাতে পারেনি বিএনপি বছরের শুরুতে সভা-সমাবেশ এবং শেষ দিকে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেও জাতীয় । ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনী মাঠে পুরোপুরিভাবে নেমে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকার পতনের দাবির সঙ্গে ‘নির্বাচন ঠেকাও’ আন্দোলনকে জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। জামায়াত, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বাম ঘরানার দলকেও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করবে তারা। পাশাপাশি দেওয়া হবে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা। এ কর্মসূচির মধ্যে টানা ফের অবরোধ থাকতে পারে।
সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির পরিকল্পনার মধ্যে থাকছে ভোটারদের ভোটদানে আগ্রহ হ্রাসে কর্মসূচি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘একতরফা’ নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচারণা, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির চেষ্টা ও রাজপথে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পন্ড করে দেওয়ার পর সারা দেশে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার, সাঁড়াশি অভিযান আর হামলার মুখে বেশ কিছুটা চাপে পড়েছিল দল। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কের পরও হাজারো কর্মী-সমর্থক ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল তেমনটি প্রমাণ করে। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ওই কর্মসূচি মনস্তাত্ত্বিক টনিক হিসেবে কাজ করেছে। এখন আর তাদের মধ্যে ভয় আতঙ্ক কাজ করছে না বলে দাবি ওই সব নেতার।
তারা বলেন, এখন জীবন-মরণ খেলা শুরু হবে। বাঁচা-মরার ওই লড়াইয়ে তাদের প্রত্যেক নেতাকর্মী সাহসের সঙ্গে রাজপথে থাকবেন। তাদের হারানোর যেমন কিছু নেই, তেমনি এবার যদি পরিবর্তন না আসে তাহলে তাদের আর অস্তিত্বও থাকবে না। প্রত্যেকের মামলা শেষ পর্যায়ে। হয় কারাজীবন, নয়তো ফেরারি জীবন। কেউ বাঁচতে পারবে না। এমন একটা পরিস্থিতিতে দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী মাঠে নামতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান তারা।
জানা গেছে, নির্বাচনকে প্রতিহত করতে এবং জনমত তৈরি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণাকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি। তাতে ‘একতরফা’ নির্বাচনে জনগণের ক্ষমতায়নে নেতিবাচক প্রভাব, ভোটাধিকার হরণ, আন্তর্জাতিক বিশ্বে নেতিবাচক সম্পর্ক তৈরির আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে এই ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের প্রভাবে দেশের শিল্প-বাণ্যিজ্যে ‘পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার’ শঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্ক করা হচ্ছে জনগণকে। সেখানে বিভিন্ন ‘নিমো’ তৈরি করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্য, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র, মামলা-হামলা আর আদালত কর্তৃক ‘ফরমায়েশি’ সাজা দেওয়ার ঘটনাও থাকবে।
রাজপথের আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি ও জোটের নেতারা বলেন, খুব শিগগির আন্দোলনের নতুন ফরমেট ঘোষণা করা হবে। সেখানে একেক দলকে একেক স্থানে সমবেত হওয়ার নির্দেশনা থাকতে পারে। কিংবা সব দলকে নিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামার কৌশলও নেওয়া হতে পারে। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী এসব দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সরকারের সীমাহীন নির্যাতনের কারণে ওষ্ঠাগত জনগণকে মাঠে নামাতে পারলে এই সরকার একদিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলে তাদের বিশ্বাস। সেই হিসাব কষেই পরবর্তী হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির পাশাপাশি আসতে পারে ঘেরাও, সমাবেশের মতো কর্মসূচি।
জানা গেছে, আন্দোলন সফল করতে রাজপথে থাকা সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতার মধ্যে আনতে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আন্দোলনরত দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। শুরুতে বাম ঘরানার কয়েকটি রাজনৈতিক দল জামায়াতকে নিয়ে আপত্তি তুললেও এখন আর সেটি নেই। দেশের প্রয়োজনে তাদের বেশিরভাগ দল ছাড় দিয়ে আন্দোলনের মাঠে একাট্টা হতে প্রস্তুত রয়েছেন।
আন্দোলন সফলের আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারে বিশ্বাসী দেশের সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল যুগপৎ ধারায় রাজপথে নেমেছে। সরকার যতই নির্যাতন-নিপীড়ন করুক বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আর নির্যাতন করে কখনোই আন্দোলন দমানো যায় না। এ সরকারও পারবে না। নেতাকর্মীরা আরও ঐক্যবদ্ধ, আরও সংকল্পবদ্ধ। এজন্য তাদের আন্দোলন সফল হবেই।