বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় সুইচ টিপে ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি সদস্যদের কল্যাণে বহুল প্রতীক্ষিত সীমান্ত ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্টের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ব্যাংকটি চালু হলো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই ব্যাংকটি কেবল বিজিবি সদস্যদের কল্যাণে নয়, সীমান্ত এলাকায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া, আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। ক্ষুদ্রঋণ, কৃষিঋণ, এসএমই ঋণ বিতরণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে অবদান রাখতে এই ব্যাংক। ব্যাংকটির স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘সীমাহীন আস্থা’।
ব্যাংকটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বিজিবি সদস্যদেরকে ঈদুল আযহার উপহার। তিনি বলেন, ‘বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আরও নতুন নতুন প্রকল্প নিলে আমি সেগুলোর বাস্তবায়ন করে দেবো।’ তিনি বলেন, ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য চারশ কোটি টাকার মূলধন দরকার। বিজিবি যতটা পেরেছে, শুরু করেছে, ধীরে ধীরে আরও টাকা দেবে তারা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সীমান্ত ব্যাংকের আয় বিজিবি পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এখান থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাবে তারা। গৃহ নির্মাণ, শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে এই ঋণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘কেবল বিজিবি সদস্য নয়, এই ব্যাংক দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে। সীমান্ত এলাকায় কর্মসংস্থান ও স্থানীয়দের পুনর্বাসনের জন্যও নানা প্রকল্পে অর্থায়ন করবে তারা।’ এই ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজিবির সন্তানরা অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবগুলো বাহিনীকে ব্যাংক করে দিয়েছি। বিমান ও নৌবাহিনীও ব্যাংক চেয়েছিল। আমি বলেছি যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে, তারা সে উদ্যোগ নিয়েছে।’
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নানা প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর ১০ শতাংশ দারিদ্র্য কমাতে থাকলে দেশে কোনো গরিব থাকবে না।’ অতি দরিদ্রদের জন্য অচিরেই পল্লী রেশনিং চালু হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান এই ব্যবস্থায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হবে।’
অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আজ আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। সেনাবাহিনীর ট্রাস্ট ব্যাংকের আদলে এই ব্যাংক পরিচালিত হবে।’
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘তিন বছরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২০টি শাখা স্থাপন করা হবে। এই ব্যাংক বিজিবি সদস্যসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটানোর পাশাপশি এই ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি থাকবে এসব শাখায়, ব্যবহার করা হবে দেশীয় ব্যাংকিং সফটওয়ার।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভাগের সচিব ইউনুছুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকায় কর্মসংস্থানের জন্য নানা প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে এই ব্যাংক কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। এই ব্যাংক কেবল বাণিজ্যিক লাভের ভিত্তিকে পরিচালিত না হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকেও নজর রাখবে।
বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন
অনুষ্ঠানে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দক্ষতা ও আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের বর্ণনা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবিতে ২৪ হাজারেরও বেশি নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে অরক্ষিত ৪৭৯ কিলোমিটার সীমান্তে ৫৫টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু বিওপির নির্মাণ কাজ চলছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণ অনুমোদন হয়েছে। বিজিবিতে এয়ার উইং গঠন করেছি। সেখানে একটি হেলিকপ্টার আছে। আরও দুটি সংযোজন হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বাহিনীকেই শক্তিশালী করছি, আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র দিচ্ছি। বিজিবিও এর বাইরে নয়। এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হবে।’ সীমান্ত এলাকায় প্রতিটি বিওপিতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া ও ইন্টারনেট সেবা চালুর ঘোষণাও দেন তিনি।
এ সময় বিজিবিতে নারী সেনা শাখা গঠনের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারীদের সুযোগ করে দিয়েছি। তারা সেখানে দক্ষতার সঙ্গে কার করছে। বিজিবিতেও নারীরা সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিজিবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে বিজিবিকে।’