স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী–১ (গোদাগাড়ী–তানোর) আসনের । স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে মাহির জমা দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকায় ‘ভুয়া স্বাক্ষর’ পাওয়ার অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিলের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এছাড়া হিরো আলম ও সঙ্গীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকা জমা দিতে হয়। এর মধ্যে চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়ার তালিকায় তিনটি নমুনা ভোটারের তথ্য পাওয়া যায়নি। আর একজন ভোটার নয়। তালিকায় ললিতা মান্ডি নামের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের ভোটার। চলচ্চিত্রের জগৎ থেকে রাজনীতির মঞ্চে উঠে নৌকার মনোনয়ন ফরম কিনে আলোচনায় আসেন মাহি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২ আসনের নৌকার মাঝি হতে চাইলেও দলের মনোনয়ন পাননি। এরপর রাজশাহী–১ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে লড়ার ঘোষণা দেন।
মনোনয়নপত্র বাতিলের পর কী করবেন জানতে চাইলে মাহি বলেন, ভুয়া স্বাক্ষরের অভিযোগ তুলে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে প্রমাণ আছে, প্রত্যেকে (ভোটার) নিজে উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষর করেছে। সেই ভিডিও আছে। আমি প্রমাণ দেখিয়ে আপিল করব।
রাজশাহী–১ আসন থেকে মোট ১১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। গতকাল যাচাই–বাছাই করে মাহি ছাড়াও আরও তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
তারা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান আখতার, গোলাম রাব্বানী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া।
হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল : রাজনৈতিক দলের মনোনীত হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা এবং যথাযথভাবে পূরণ না করায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বগুড়া–৪ (কাহালু–নন্দীগ্রাম) আসন থেকে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির মনোনয়নে প্রার্থী হন তিনি। তবে যাচাই–বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখেন, হিরো আলম যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র পূরণ করেননি। এজন্য তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয় বলে জানান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থী হলেও হিরো আলম স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র পূরণ করেন। রাজনৈতিক দলের স্থানে হিরো আলম লিখেছেন ‘প্রযোজ্য নহে’। দলীয় মনোনয়নে মূল কপি তিনি জমা দেননি। ফটোকপি দিয়েছেন। এটা একটি বিষয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আপনার ভোটার তালিকার এক শতাংশ সমর্থনের তথ্য জমা দিতে হবে। উনি সেটিও করেননি। এখানেও আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। তারপর হিরো আলম তার হলফনামার সঙ্গে সম্পদের আয়–ব্যয় বিবরণী জমা দেননি। এছাড়া তার হলফনামা নোটারি পাবলিক করা থাকলেও সেখানে স্বাক্ষর করেননি।
এ সময় স্বাক্ষর করার সুযোগ চেয়ে হিরো আলম বলেন, সম্পদ বিবরণী আছে। সেটা দেওয়া ছিল। উকিল জমা দিতে ভুল করেছে। আর হলফনামায় এখন স্বাক্ষর করে দিচ্ছি। কিন্তু সভা কক্ষে উপস্থিত অন্য প্রার্থীরা এটাতে আপত্তি জানান।
হিরো আলম বলেন, এটা কোনো বিষয় নয়; এর আগেও বাতিল করেছিল। হাই কোর্ট থেকে রায় এনেছি, এবারও তাই করব।
ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল : ঋণখেলাপির কারণে পাবনা–২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীসহ তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই করে তা বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ডলি সায়ন্তনীর ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। বাকি দুজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায়।
মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণার পর ডলি সায়ন্তনী সাংবাদিকদের বলেন, ক্রেডিট কার্ডের বিষয়টি আমার খেয়াল ছিল না। বিষয়টি আমি দ্রুত সমাধান করে আপিল করব। তিনি বলেন, আমার জন্ম পাবনা শহরের সোনাপট্টি এলাকায়। দাদার বাড়ি সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভায়না গ্রামে। সেখানে আমার চাচারা থাকেন। এজন্য আমি সেখানে প্রার্থী হয়েছি। আশা করি পাবনা–২ আসনের মানুষ আমার পাশে থাকবে।