ক্রিকেটাররা সেসব নিয়মের বেশিরভাগই জানেন।ক্রিকেট খেলা আমাদের পরিচিত হলেও তার অনেক নিয়ম অনেকের জানার বাইরে। তবে সে জন্যই বিশ্বকাপের মঞ্চে শ্রীলংকার বিপক্ষে ‘টাইমড আউট’ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হয়েছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার।
অদ্ভুত আউট হলেন মুশফিকুর রহিম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ব্যাটিংয়ের সময় হাত দিয়ে বল আটকিয়ে অঘটনের জন্ম দেন তিনি। এরপর আউট দেওয়া হয় মুশফিককে। তিনি আউট হয়েছেন ৮৩ বলে ৩৫ রান করে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটিতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। লাঞ্চের আগে ৪ উইকেট হারালেও বিরতির পর ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন দিপু। তবে বিপত্তি ঘটিয়ে বসেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশিফকুর রহিম। খেলার ৪০.৪ ওভারে কাইল জেমিসনের বলে ব্যাট করেন তিনি। বলটি ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে যাচ্ছিল। সে সময়েই হাত দিয়ে বল আটকান মুশফিক। এতে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউটের আবেদন করেন এবং তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লে দেখে মুশফিককে আউট ঘোষণা করেন।
কিউই পেসার জেমিসনের বল ব্যাকফুটে খেলেছিলেন মুশফিক। কোনো বিপদ সেখানে হয়নি। বল পয়েন্টের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু মুশফিক ইচ্ছাকৃতভাবে বল ডান হাত দিয়ে ধরে সরিয়ে দেন। যা ক্রিকেটের আইনের বাইরে। মুশফিক ব্যাট দিয়ে বল সরালে কোনো ঝামেলা হতো না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে বল হাত দিয়ে সরানোর সুযোগ নেই।
এ ধরনের আউট এর আগে কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার হননি। এমনকি সব মিলিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে ১১তম এবং টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অষ্টমবার এই আউট দেখা গেল। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউটের ঘটনা ঘটেছিল প্রায় ৭২ বছর আগে।
মুশফিক আউট হওয়ার সময় ধারাভাষ্যে ছিলেন জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল। মুশফিকের এমন আউট দেখে হতবাক হন তামিম। মাইক্রোফোনে তিনি বলেন, ‘এটা মুশফিকের বোঝা উচিত ছিল। সে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। এভাবে কোনো ব্যাটসম্যান বল আটকাতে পারেন না। বিষয়টি হতাশাজনক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই প্রথম এমন আউট দেখা গেল। সাধারণত অনুশীলনের সময় ব্যাটসম্যানরা এভাবে বল আটকিয়ে থাকেন। মুশফিক সেটিই করে ফেললেন ম্যাচ চলাকালীন।’
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাটের স্পর্শ এবং প্রতিপক্ষ দলের ফিল্ডারদের সম্মতি ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে বলে স্পর্শ করতে পারবেন না। যদি করেন তাহলে সেটি ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউটের জন্য বিবেচিত হবে। মুশফিক এই নিয়ম ভেঙে আউট হয়েছেন। যদিও ২০১৭ সালে এটিকে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ এর অন্তর্ভুক্ত করে এমসিসি।
এদিকে এমন আউট মুশফিক প্রথম হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি নতুন নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি এই আউট হয়েছেন। আর টেস্টে অষ্টম। ১৯৫১ সালে ওভাল টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম এভাবে আউট হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ওপেনার লেন হাটন।
আর মুশফিকের আগে সবশেষ ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে বনাম আফগানিস্তানের মধ্যকার একটি ওয়ানডে ম্যাচে। বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের চামু চিবাবা ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এভাবে আউট হওয়ার তালিকায় আছেন স্টিভ ওয়াহ, ডেসমন্ড হাইন্স, গ্রাহাম গুচ, মাইকেল ভন, মহিন্দর অমরনাথের মতো নাম।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হওয়া খেলোয়াড়দের তালিকা-
ক্রম নাম পক্ষ প্রতিপক্ষ সাল ফরম্যাট
১ রাসেল এনডেন দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ড ১৯৫৭ টেস্ট
২ অ্যান্ড্রু হিলডিচ অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তান ১৯৭৯ টেস্ট
৩ মহসিন খান পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়া ১৯৮২ টেস্ট
৪ ডেসমন্ড হাইন্স ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারত ১৯৮৩ টেস্ট
৫ মহিন্দর অমরনাথ ভারত অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৬ ওডিআই
৬ গ্রাহাম গুচ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া ১৯৯৩ টেস্ট
৭ ড্যারেল কালিনান দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৯৯ ওডিআই
৮ স্টিভ ওয়াহ অস্ট্রেলিয়া ভারত ২০০১ টেস্ট
৯ মাইকেল ভন ইংল্যান্ড ভারত ২০০১ টেস্ট
১০ চামু চিবাবা জিম্বাবুয়ে আফগানিস্তান ২০১৫ ওডিআই
১১ মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ২০২৩ টেস্ট
ক্যাপসন : নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরে বুধবার হাত দিয়ে বল ধরে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হয়েছেন টাইগার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম -ওয়েবসাইট