মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চট্টগ্রাম–১১ আসনের সংসদ সদস্য এম.এ লতিফ গত কয়েকদিন ধরে মহানগর আওয়ামীলীগ ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘কটূক্তি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলা লঙ্ঘন’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সভায় এ ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। একই সাথে সাংসদ এম.এ লতিফের কাছে এই ব্যাপারে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়ার এবং তার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে চিঠি দেয়ার ব্যাপারে সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে নগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র এ রেজাউল করিম চৌধুরী এম এ লতিফের সভায় গিয়ে দলের তৃণমূল নেতাদের ‘ছিন্নমূল’ বলায় তাঁর কাছে নগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের সিনিয়র নেতারা ২–৩দিনের মধ্যে সরাসারি গিয়ে এই বিষয়ে জানতে চাওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া যত বড় নেতাই হই না কেন আমরা কেউই দলের উর্ধ্বে নই। কেউ যদি দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেন তাকে কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে যে দিক নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন তা থেকে তিল পরিমাণ বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, দল এবং দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করা হবে এবং আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তিনটি আসন এবং মহানগর সংশ্লিষ্ট আরো তিনটি আসনসহ ৬টি আসনে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন তাকে অবশ্যই বিজয়ী করবো। কিন্তু বিতর্কিত কোনো ব্যক্তিকে যদি নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় তাহলে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে মহানগর আওয়ামী লীগের মতামত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্যই বিবেচনা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের অন্তর্ভুক্ত ও আওতাধীন ৬টি আসন থেকে যিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও মতামতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচন করতে হবে। কেউ যদি বিচ্ছিন্নভাবে নিজের মতো করে নির্বাচন করেন তাহলে সেটা সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে পরিণত হবে এবং তা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। বিগত কয়েকদিন ধরে এম.এ লতিফ সভা সমাবেশ করে দলের পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের নিয়ে কটূক্তি ও অপবাদ দিয়েছেন। মেয়র সাহেব তাঁর সভায় গিয়ে আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ছিন্নমূল বলে অপবাদ দিয়েছেন। যা আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারি না।
সভায় সর্বসম্মতভাবে এই গৃহীত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে আগামী ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার শহীদ বুদ্ধি দিবসে ফয়েজলেকস্থ বদ্ধভূমিতে সকাল ১০টায় শহীদে স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন; আগামী ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সফল মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে ১০টায় চশমা হিলস্থ জামে মসজিদে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল শেষে কবর জিয়ারত এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন এবং বিকাল ৩টায় হোটেল সৈকত মিলনায়তনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে; আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকল শহীদের স্মরণে চট্টগ্রাম অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, প্রমুখ।