সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা খাদ্য, জ্বালানি, উৎপাদন ও সেবা সহায়তা খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন মাত্রা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ এর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যদের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গতকাল বুধবার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এক বৈঠকে দেশটির উদ্যোক্তাদের এমন বিনিয়োগ পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে আসে।
ঢাকায় আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সৌদি আরবের বাইরে বাংলাদেশই হতে পারে দেশটির সম্ভাবনাময় বিকল্প বিনিয়োগের লক্ষ্য। বৈঠকে তাদের এমন ধারণার কথাই তুলে ধরেছেন সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে ‘খুবই স্বাগত’ জানিয়েছেন। ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে সৌদি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সফরকারী ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকার উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা করবে।
বৈঠকে সৌদি বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বলেন, বাংলাদেশ সৌদি আরবের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু। এতদিন সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুধু কয়েকটি খাতে বিদ্যমান ছিল। তবে এখন সময় এসেছে উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাণিজ্যকে সহজতর করার উপায়গুলো খুঁজে বের করার।
বাংলাদেশে তার দেশের বিনিয়োগ ও সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। বৈঠকে সোদি আরবে বিনিয়োগ বিষয়ক উপমন্ত্রী বদল আল বদর জানান, এবারের সফরকালে তার দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ১২৫টির মতো বৈঠক করেছেন। অনেকগুলো সৌদি কোম্পানি বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক খাতগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী। সৌদি ব্যবসায়ীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি, লজিস্টিকস, টেঙটাইল, হসপিটালিটি–হেলথকেয়ার খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান তিনি। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে একটি বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে বলে জানান এই উপমন্ত্রী।
বৈঠকে সৌদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ মাসের মধ্যেই সৌদি আরএসজিটিআই টার্মিনাল পরিচালনা শুরু করবে। পতেঙ্গা টার্মিনাল চালু হলে খরচ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হবে। ২০২২ সালে সৌদি–বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল গঠন হয়েছে জানিয়েছে তিনি বলেন, সকালে এ কাউন্সিলের একটি সভা হয়েছে। সেখানে জেদ্দা চেম্বার, রিয়াদ ফেডারেশন চেম্বারের প্রতিনিধিরা ছিলেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা এবং যেকোনো সময় মুনাফাসহ বিনিয়োগ ফেরত নেওয়ার মতো বিষয়গুলো তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। তিনি জানান, সৌদি আরামকোসহ দেশটির ৪০টির মতো বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুঁজে বের করার জন্য। তারা বাংলাদেশে বড় একটা বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জ্বালানি, লজিস্টিকস, খাদ্য ও উৎপাদনসহ বেশ কয়েকটি খাত নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতা মাহবুবুল বলেন, এইদিক থেকে প্রাণ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এরা এসেছে। আমরা চাই আপাতত দুই–তিনটা সেক্টরে তারা বিনিয়োগ শুরু করুক। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা তাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়। ৫০ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কোন খাতে কত বিনিয়োগ লাগবে সেটা হচ্ছে বড় কথা। বৈঠকে সৌদি বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আয়াদ আল আমরি, ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈশা ইউসেফ ঈশা আল–দুহাইলানও বক্তব্য রাখেন।