বাংলাদেশে পাকবাহিনীর প্রায় সব বিমান বিধ্বস্ত। মিত্রশক্তির বিমানবাহিনী ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখল করে নেয়।  সারাদিন ধরে ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো অবাধে আকাশে উড়ে পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। অকেজো করে দেয় বিমান বন্দরগুলো। ভারতের বিমানবাহিনীর হিসাব মতে বারো ঘণ্টায় দুশ’ বত্রিশবারে তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাটিতে পঞ্চাশ টনের মতো বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়েছে। পাকবাহিনীর কনভয়ের ওপর ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলোর আক্রমণে নব্বইটি গাড়ি ধ্বংস হয়। এছাড়াও পাকবাহিনীর সৈন্য বোঝাই কয়েকটি লঞ্চ এবং স্টিমারও ধ্বংস হয়। সাবমেরিন গাজী পাক নৌবহরের গর্বের বস্তু। বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথকমান্ডের সফল আক্রমণে তা ধ্বংস হয়। সাবমেরিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পাকিস্তান ধার হিসেবে পেয়েছিল। নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ড চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সব নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে বন্দর ত্যাগের পরামর্শ দেয়। তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতেও অপারগতা প্রকাশ করে। প্রধান হুঁশিয়ারিটি ছিল চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কে। বলা হয়, আপনারা সবাই চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে চলে যান। আপনাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা তেমন বোমা বর্ষণ করিনি। আপনাদের বের হয়ে আসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমরা প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালাব। সুতরাং আপনাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারব না। এ সতর্ক বাণীতে দুটি কাজ হলো–বিশ্বের সব দেশ বুঝল বাংলাদেশের বন্দরগুলো রক্ষা করার কোনো ক্ষমতা আর পাক বাহিনীর নেই। ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ও বিমানগুলো সব বন্দরকে ঘায়েল করার সুযোগ পেল। মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট স্থলপথে এগিয়ে আসতে থাকে। পাক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন। প্রধান সড়ক দিয়ে না এগিয়েও মিত্রবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান প্রধান সড়কের কতগুলো এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের, নাটোরের সঙ্গে ঢাকা ও রংপুরের এবং যশোরের সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুধু ঢাকার সঙ্গে যশোর ও খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনও অব্যাহত ছিল।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031