দুদিনে মোট বাতিল হলো ৩২ জনের দ্বিতীয় দিনে বাদ পড়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মাহমুদুল ইসলাম, মোতালেব, ফরিদ মাহমুদ, ইসলামী ফ্রন্টের মতিন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে আরও ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। গতকাল মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, স্বতন্ত্র–প্রার্থী এম এ মোতালেব, আ ম ম মিনহাজুর রহমান, ফরিদ মাহমুদ, রেখা আলম, ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন প্রমুখ। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে এ নিয়ে মোট ৩২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলো। এর মধ্যে ২১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ১১ জন দলীয় প্রার্থী। প্রসঙ্গত, এ ১৬ আসনে মোট ১৪৮ জন প্রার্থী মোট ১৫১টি মনোনয়নপত্র জমা দেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ সমর্থকসূচক ভোটের গড়মিল, ঋণ খেলাপি–বিল খেলাপি, আয়কর সার্টিফিকেট না দেয়া, প্রস্তাবক–সমর্থকের স্বাক্ষর না থাকায় ৩২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় বলে জানানো হয়েছে। গতকাল বাছাইয়ের শেষদিনে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম চট্টগ্রাম–৯ কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম–১০ ডবলমুরিং এবং চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই করেন। বাছাইকালে ৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।

অপরদিকে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান মনোনয়নপত্র বাছাই করেন চট্টগ্রাম–৭ রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া, চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া একাংশ), চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া–সাতকানিয়া একাংশ) এবং চট্টগ্রাম–১৬ বাঁশখালী আসনের প্রার্থীদের।

নগরীর ৩ আসনের মনোনয়নপত্র বাছাইকালে চট্টগ্রাম–৯ কোতোয়ালী আসনে ৭ জন প্রার্থীর কারো মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। চট্টগ্রাম–১০ ডবলমুরিং আসনের ১২ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র এবং ১ জন দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যে ৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা হলেন–এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের পুত্র এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফয়সল আমীন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ওসমান গনি এবং বিএনএফ–এর প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে মোট ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখা আলমের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থকসূচক ভোটারের গড়মিলের কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ৫ আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ৫জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। সকালে প্রথমে চট্টগ্রাম–৭ রাঙ্গুনিয়া আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই শুরু হয়। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ ৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইকালে বৈধ ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনে ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ২ স্বতন্ত্রসহ ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াছ মিয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এক শতাংশ সমর্থকসূচক ভোটের গড়মিলের কারণে বাতিল হলেও এম এ মতিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে।

চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া একাংশ) আসনে মোট ৮জন প্রার্থীর মধ্যে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি।

চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া–সাতকানিয়া একাংশ) আসনে মোট ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব, ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমানসহ ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দুই জনেরই এক শতাংশ সমর্থকসূচক ভোটারে তথ্যে গরমিল পাওয়া যায় বলে বাছাইকালে রিটানির্ং অফিসার জানিয়েছেন। রিটানিং কর্মকর্তা জানান, এম এ মোতালেব সাতকানিয়া থেকে ৮ জন এবং লোহাগাড়া থেকে ২ জন সমর্থক ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিয়েছেন। এর মধ্যে রোকেয়া বেগম এবং পরিমল নাথ স্বাক্ষর করেননি বলে মাঠ পর্যায়ের যাচাইকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু গতকাল শুনানিকালে এই দুইজনকে হাজির করা হলে সেখানে একজনের তথ্যে গড়মিল পাওয়া যায়।

মিনহাজুর রহমানের ১০ জন সমর্থকসূচক ভোটারের মধ্যে যাচাইকালে ১টি ছাড়া ৯ জন স্বাক্ষরের কথা স্বীকার করেছেন। এই কারণে তাদের দুইজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এসময় এম এ মোতালেব এবং মিনহাজুর রহমান রিটানিং কর্মকর্তাকে জানান, তাদের সমর্থকসূচক ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। একজনকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে। এই কারণে তারা অস্বীকার করেছেন। রিটানিং কর্মকর্তা ও জলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান তাদেরকে নির্বাচন কমিশনে আপীল করতে বলেন।

এছাড়া যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী ফজলুর হকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তিনি মনোনয়ন ফরমে, ফরম–২০ এ প্রার্থী স্বাক্ষর না থাকায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়।

অন্যদিকে ঋণ খেলাপি হওয়ায় চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। বাছাইকালে রিটানিং কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে তিনি তিন প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন। এই আসনের অপর প্রার্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী আশীষ কুমার শীলও ঋণ খেলাপি হয়েছেন। তিনি এবি ব্যাংকে একজনের পক্ষে জামিনদার। অপরদিকে যথাযথ কাগজপত্র দাখিল না করায় একই আসনের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. শওকত হোসাইন চাটগামীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, গত দুইদিনে ১০টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ঋণ খেলাপি, বিল খেলাপি, এক শতাংশ ভোটারের সমর্থসসূচক তথ্যে গড়মিলসহ নানান অসঙ্গতিতে ১৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকদের তালিকায় গরমিল থাকায় মনোনয়নগুলো বাতিল করা হয়। বাতিল হলেও প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন প্রার্থীর নথিপত্র পর্যাপ্ত না থাকায় তাদের আজ সময় দেওয়া হয়েছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031