আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা  জন কেরির সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে বলে মনে করছেন। তাদের ভাষ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশেই আন্তরিকতা দেখিয়েছে। সম্প্রতি জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে সেটিও ওয়াশিংটন ভালোভাবে নিয়েছে। এসব বিবেচনায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান এহসানুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে এমনিতেই ভালো রয়েছে। তবে জন কেরির সোমবারের সফরের মধ্যদিয়ে এই সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব পর্যায়ের ভূমিকায় রয়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি জঙ্গি দমনে যে সাফল্য দেখিয়েছে সেটিও বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। জন কেরি বাংলাদেশের এই সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। এই সফরে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদী ও বিস্তৃত সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক উভয় সম্পর্কই জোরদার করতে চায়। এ কারণেই জন কেরির সফর। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসন এখন শেষ সময় পার করছে। আসন্ন নির্বাচনে ওবামার দল না জিতলেও তাদের পররাষ্ট্রনীতির খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। তাই বলা যায় দুই দেশের সম্পর্ক আরও সৃদৃঢ় ও মজবুত হলো।’

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশ সফর করছেন। এই অঞ্চলে দেশটি তাদের আধিপত্য জোরদার ও শক্তিশালী করতে চায়। আর বাংলাদেশ এ অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রয়োজনেই সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। আর বাংলাদেশ বৈশ্বিক দিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়।  এসব বিবেচনায় দুই দেশের মধ্যে আন্তরিক বৈঠক হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। ফলে জন কেরির সফরের মধ্যদিয়ে ‍দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মোড় নেবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘জন কেরি তার সফরে বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শুধু উন্নয়ন অংশীদার (পার্টনার) নয়, বন্ধু হতে চায়। ঘোষণা দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থাকার। প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দাদের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাহায্য করার। জিএসপি নিয়ে কথা না বললেও একমত হয়েছেন অর্থনৈতিক বাজার সম্প্রসারণের। আশ্বাস দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার। এসব তো সম্পর্ক উন্নয়নেরই ইঙ্গিত।’

সোমবারের সফলে ইএমকে সেন্টারে বাংলাদেশের তরুণ সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বক্তৃতায় কেরি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের জন্য প্রয়োজন তথ্য বিনিময়, নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ও সুশাসন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশের পার্টনার নয়, বন্ধু হতে চায় বলেও মন্তব্য করেন। কেরি বলেন, ‘গুলশান হামলা চালানো হয়েছিল বাংলাদেশকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে এটা কখনোই সম্ভব নয়। তাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র পাশে আছে এবং থাকবে।’বক্তব্যের পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে কেরি বলেন, ‘নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মতবিরোধ আছে বলে আমি মনে করি না।’

সফর শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দুটি বার্তা দিয়েছেন জন কেরি। প্রথম টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয় এবং সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় আমাদের দৃঢ় সমর্থন নিয়ে আজ বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।’দ্বিতীয় বার্তায় কেরি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের একটা অসাধারণ উন্নয়ন গল্প রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে আমি আনন্দিত।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031