বড় পরিসরে ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছে ছোট দলগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে । গত নির্বাচনে দু-একটি আসনে জয় পাওয়া এসব দলের বেশিভাগই এবার ২শ’ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি কোনো আসন না পাওয়া এবং এর আগে ভোটে অংশগ্রহণ না করা দলগুলো শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। এসব দলের শীর্ষ নেতা ও প্রধানরা প্রায় সবাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও বিশ্লেষকরা এ প্রক্রিয়াকে দেখছেন ভোটের রাজনীতিতে নতুন কৌশল হিসেবে। বিএনপি অংশ না নেয়ায় ভোটে উত্তাপ ধরে রাখতে এবং কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। যার অংশ হিসেবে জোটে থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ আসন ভাগাভাগি কমিয়েছে। এমনকি গতবারের বিরোধী দল জাপাকে মাত্র ৩টি আসন ছাড়ের কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা।
অন্যদিকে, নির্বাচনী দৌড়ে এবার যুক্ত হয়েছে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩৯ দলের মধ্যে অধিকাংশ ছোট দল (৩০টি) কোনো জয় না পেলেও বাড়িয়েছেন নির্বাচনী সীমা। এখন পর্যন্ত ৩০০ আসনের জন্য ২৬টি রাজনৈতিক দল ৩ হাজারের বেশি প্রার্থী দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন ও দলগুলোর তথ্যনুযায়ী, ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩শ’ আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাকের পার্টি, যদিও গত নির্বাচনে ৮৯টি আসনে ভোট করে একটিতে জয় পায়নি। এছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটের অংশ হিসেবে রয়েছে দলটি।
একই অবস্থা আ.লীগের নির্বাচনী জোটের অন্যতম দল জাসদের হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন এ দলটি গত নির্বাচনে ১২ আসন প্রার্থী দিলেও জয় পেয়েছে কেবল আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া ২টি আসনে। কিন্তু দলটি এবার ১৮১ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে এবার কোনো আসন ছাড় দেওয়া হয়নি তাদের। এর আগে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হলেও দলীয় প্রতীক মশালে কোনো জয় পায়নি জাসদ। তবে জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু মনে করেন অতীতের যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় এবার তার দলের প্রার্থীরা বেশি আসনে জয় পাবেন।
আরেক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি গত নির্বাচনে ৮১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোনো জয় পায়নি। তবে আসন্ন ভোটে ২৩৭টি আসনে অংশ নেবে তারা। এদিকে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট দল প্রথম ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। মাত্র দু’টি আসনে নির্বাচন করে দলটি ভোট পেয়েছিল ১ হাজার ২১৯টি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ২শ’ আসনে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এবার তাদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি দল যোগ দিয়েছে। তারাও দলীয় প্রতীক লাঠি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
মহাজোটের আরেক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১২৩ আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনে ১৭ আসনের মধ্যে মাত্র ১টি আসনে জয় পায় তারা। তবে ২০১৪ সালে জোটের অংশ হিসেবে ২টি আসন লাভ করেছিল। এবারও নির্বাচনে জোটে ১৩টি আসন চেয়েছে দলটি। সারা দেশে তাদের দলীয় কমিটি রয়েছে দাবি করে সংবাদমাধ্যমে দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, চাইলে তারা ২শ’ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন। এছাড়াও ছোট দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এবার ৭০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ২০১৮ সালেও তারা ৫৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। আরেক দল বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট ৩০০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ১শ’টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে দলটি ২৫ আসনে প্রার্থী দিলেও কোনো জয় পায়নি দলটি।
এদিকে নির্বাচনে যাওয়া ২৬ দলের মধ্যে রয়েছে নতুন তিনটি দল। তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশলানিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি। নতুন দল হিসেব রেকর্ড সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এর মধ্যে বিএনপি থেকে বের হয়ে আসা নেতাদের নিয়ে গঠিত তৃণমূল বিএনপি ২৮০ আসনে , বিএনএম ২৫০টি আসনে ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি ১২১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
দল তিনটি মধ্যে তৃণমূল বিএনপি এবার বেশ আলোচিত। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ২০১৫ দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। আরেক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট চলতি বছরের আগস্টে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালেÑ যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাইয়েদ সাইফুদ্দিন আহমেদ আল হাসানী।