নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তফসিল পুনর্বিবেচনা ও সময় বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তে অনড়; আর পুনঃতফসিলের কোনো আবেদন ইসিতে না পৌঁছানোয় নির্বাচনের দিনক্ষণের কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে জানিয়েছে ইসি।
এদিকে, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি, সেই ভোটের মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হলো।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় সময় শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সামনে আসেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমার সময় আর বাড়ানো হচ্ছে না। বিকাল ৪টায় সময় শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এ সময়সীমা বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই।’
তাহলে বিএনপিকে ছাড়াই কি নির্বাচন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আপনারা বুঝে নেন।’
এর আগে, নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতানৈক্যের মধ্যেই গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এবং তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে মঙ্গলবার এবং সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন বিরতি দিয়ে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। দশম দফায় আগামী রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ, নৌপথে বিএনপি অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আপনারা আগে থেকেই অবহিত রয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা অতিক্রম করেছে। প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কোন আসনে কারা কারা প্রার্থী হয়েছে তা পরে জানানো হবে।’
এ দিন বিকাল ৩টায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বসেন। বিকালে জনপ্রশাসন সচিব, সকালে জননিরাপত্তা বিভাগ সচিব, আইজিপির সঙ্গে ইসির বৈঠক হয়। আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সাক্ষাৎ করেছিলেন। বিশেষ করে আইজিপি মহোদয় সামগ্রিক বিষয় অবহিত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় কোনো নির্দেশনা আছে কি না তা জেনে নিয়েছেন। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।’
জাহাংগীর আলম জানান, কিছু কিছু প্রার্থী কোনো কোনো জায়গায় আচরণবিধি ভঙ্গ করায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি তাদের তলব করেছেন। এছাড়া রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে নির্বাহী হাকিমরাও কাজ করছেন। তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
বেশ কয়েকটি দল এখনো মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি, ইতোমধ্যে সময় শেষ হয়েছে, আর কোনো সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বিধায় এই সীমা বর্ধিতকরণের আর কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে, এখন পর্যন্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে। বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪টি। ইসি মনে করছে, ৩০টির বেশি দল এই নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্যদিকে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ১৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য কমিশনের কাছে নেই।
একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসির ঘোষিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন থেকেই প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। বিএনপিসহ ডজনখানেক দল ভোট বর্জন করেছে। আর অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯-৩০টি দল।