সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত মনোনয়নের চিঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে এসেছেন। মনোনয়নপ্রাপ্তদের ঘিরে চট্টগ্রামের–১৬ আসনে যেমন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। একই সাথে দলের মধ্যে তাদের বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের (মনোনয়ন বঞ্চিত) নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
গতকাল চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ৯টি আসনে আওয়ামী লীগের ৭ হেভিওয়েট নেতাসহ ১৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এতে এ সব আসনে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হওয়া এমন অনেক প্রার্থী দলীয় সিগন্যালে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করে তোলার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে এলাকার নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের চাহিদার কারণে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা জানান আজাদীকে।
গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সারাদেশে ২৯৮ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে। গতকাল দলীয় মনোয়নপ্রাপ্তদের দলের মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম–১ মীরসরাই আসনে সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার নিজের ছেলেকে এই আসনটি ছেড়ে দিয়েছেন। দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবুর রহমান রুহেল। এই আসনে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। স্থানীয়দের মতে, এই আসনে রুহেলের সাথে গিয়াস উদ্দিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব।
চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দাগাঁও) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন মহানগর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। গতকাল তার পক্ষে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন করার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান আওয়ামীলীগ নেতা আবদুচ ছালাম।
এই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কৃষান চৌধুরীও। তিনিও গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদিকে একই আসন থেকে দলীয় হাইকমান্ডের অনুমতি পেলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল কাদের সুজন। তিনি বলেন, আমি রাতে ঢাকায় যাচ্ছি। যদি কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যাল পায় তাহলে নির্বাচন করবো। আমি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
চট্টগ্রাম–১০ ডবলমুরিং–খুলশী আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী মাঠে অবতীর্ণ হচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। তাই নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচিত হয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
এম মনজুর আলম বলেন, আমি তো সারাজীবন এই এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের সংসদীয় আসনে ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে অনেক এলাকা অবহেলিত। যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম, তখন যতটুকু পেরেছি করেছি। আল্লাহ কামিয়াব করলে অবশিষ্ট কাজ ভবিষ্যতে শেষ করতে চাই। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য এলাকার সার্বিক উন্নয়ন। আমি এই এলাকার সন্তান। কারো ভাই, কারো নাতি, কারো আত্মীয়। তাদের জন্য কিছু করতে চাই। সবার দোয়া চাই।
এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের জন্য গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন।
চট্টগ্রাম–১১ বন্দর–পতেঙ্গা আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বতর্মান সংসদ সদস্য এম এ লতিফের সাথে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।
চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনের বতর্মান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এই আসনে এবার দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও এই আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে তিনি পটিয়া উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরসহ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন।
চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া একাংশ) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বতর্মান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এই আসনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।
চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া–সাতকানিয়া একাংশ) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুর রহমানও।
চট্টগ্রাম–১৬ বাঁশখালী আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হচ্ছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন।