চট্টগ্রামের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গেলেও বিপুল সংখ্যক ‘নেতা’ রিল্যাক্স মুডে রয়েছেনদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তাদের খুব বেশি ‘টেনশন’ নেই। বাঘা বাঘা প্রার্থীদের যেখানে ঘুম হারাম হয়ে গেছে, সেখানে তাদের এই রিল্যাক্স মুড ‘মনোনয়ন যুদ্ধে’ নতুন মাত্রা দিয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। সর্বশেষ সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ২১৭জন নেতা। এদের মধ্যে মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ছাড়াও বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। চট্টগ্রামের মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন নিজেদের মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে ‘নিশ্চিত’ হলেও বাকিদের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে সংসদ সদস্য রয়েছেন এমন কেউ কেউ বাদ পড়তে যাচ্ছেন এমন একটি প্রচারণা অনেকদিন ধরে চলছিল। চলছে নানা যোগ বিয়োগ। রকমারি সমীকরণ নিয়েও রয়েছে আলোচনা। চায়ের কাপে ঝড় চলছে চট্টগ্রামের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তা নিয়ে।
দলীয় সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরও টেনশনের শেষ নেই। কাকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। চট্টগ্রামে শতাধিক নেতা মনোনয়ন দৌঁড়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত বলেও কর্মীদের কাছে প্রচার করেছেন। এদের কেউ কেউ নিজেদের উপর ‘নেত্রী’র আস্থা রয়েছে, গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন এমন দাবি নিয়েও মাঠে রয়েছেন। তবে মুখে যা–ই বলুন না কেন, এদের ভিতরের টেনশন বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামে কয়েকজন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে নির্বাচনী যুদ্ধে নেমেছেন। মনোনয়ন নিয়ে এদের টেনশনও চোখে পড়ার মতো।
দলীয় পদপদবী নিয়ে দীর্ঘদিন মাঠে থাকা অনেক নেতাই বর্তমান সংসদ সদস্যদের বাদ দিয়ে তাদের মনোনয়ন দেবেন এমন আশা যেমন করছেন আবার ‘হবে’ কি ‘হবে না’ তা নিয়েও ভুগছেন অশান্তিতে। আবার জোটের জন্য কোন আসনটি কাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, কাকে নির্বাচনের মনোনয়ন না দিয়ে টেকনোক্র্যাট কোটায় বুঝ দেওয়া হবে তা নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা।
চট্টগ্রামের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এই টেনশনের গতকাল অবসান হবে এমন একটি আশাও চাঙা হয়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয়েছিল যে, দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা থেকে গতকাল চূড়ান্ত একটি তালিকা হয়তো আসতে পারে। যাদের মনোনয়ন দেওয়ার তাদের দিয়ে দেওয়া হবে, না দিলেও জানিয়ে দেয়া হবে। এতে টেনশনের অবসান হবে।
কিন্তু গতকাল আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় রাজশাহী বিভাগের ৩৬টি এবং রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে কারো নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলেও ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ২৩টি আসনের মনোনয়ন আজ চূড়ান্ত হয় কিনা তা নিয়েও নতুন আলোচনা চলছে। এতে করে প্রার্থীদের টেনশনের মেয়াদ বাড়লো। এরা প্রায় সকলেই রাজধানীতে অবস্থান করছেন। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে ছুটছেন দুয়ারে দুয়ারে। নানাভাবে চেষ্টা তদবির করছেন। খোঁজ করছেন নতুন নতুন কানেকশনের।
টেনশনে তারা ক্ষণে ক্ষণে স্বপ্ন আর হতাশার জোড়াতালি দিচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে একেবারে রিল্যাক্স মুডে রয়েছেন বেশ কিছু মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না। ঘনিষ্টজনদের কাছে তাদের বক্তব্য এমন যে, ‘মনোনয়ন যে পাবো না সেটাতো আমরা নিশ্চিত। ‘নাম’ প্রচারের জন্যই ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। এটা আবার তারা যে মাঠে আছেন সেটার জানান দেয়া।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের যে টার্গেট ছিল সেটি পূরণ হয়েছে। এখন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সাথে আমরা কাজ করবো। চট্টগ্রামের মনোনয়ন না পাওয়া এমন ‘নিশ্চিত’ নেতার সংখ্যা একশ জনের বেশি। তারা নিজেরা যেমন টেনশন ফ্রি রয়েছেন, তেমনি তাদের সমর্থকেরাও। তারা বলছেন, মনোনয়ন নিয়ে তাদের কৌতুহল রয়েছে, তবে তারা তা পাচ্ছেন না সেটা নিজেরা নিশ্চিত।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের জন্য এবার যে ২১৭জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের অনেকেই দলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতা। এর আগে আর কোনো নির্বাচনে দলের এমন পর্যায়ের নেতাদের এতো বিপুল সংখ্যক মনোনয়নের প্রত্যাশা করতে দেখা যায়নি। মাস খানেক আগেও কোনো আলোচনায় ছিলেন না, এমন অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আর বর্তমান ‘মহাটেনশন’ তারা বেশ অবলীলায় কাটিয়ে দিচ্ছেন।
গতকাল এমন কয়েকজন নেতার সাথে ফোনে কথা বললে তারা বেশ উচ্ছ্বাসের সাথে বলেন, দল কাকে মনোনয়ন দেবে সেটা আমরা দেখছি। যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়ে কাজ করবো। মনোনয়ন না পেলে খারাপ লাগবে কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, খারাপ লাগবে কেন! দল যা ভালো বুঝবে তা করবে। একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সবাই মিলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি বলেই এমন উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।