আবহাওয়াবিদরা ঘূর্ণিঝড় মিধিলির পর বঙ্গোপসাগরে ‘মিগজাউম’ নামে নতুন একটি ঘূর্ণিঝড় চলতি নভেম্বরে সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন । তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ফের একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরে এটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তখন এটির নাম হবে মিচাহং। উচ্চারণ করতে হবে মিগজাউম। এই নাম প্রস্তাব করেছে মিয়ানমার। তবে স্থানভেদে ঘূর্ণিঝড়ের এ নাম পরিবর্তন হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে এটি ডিসেম্বরের ১ থেকে ৩ তারিখে মধ্যে আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের উপকূলে। বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এ জন্য টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর। ২৮ নভেম্বরের পরে মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্রে থাকলে ডুবে গিয়ে জেলেদের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাসমূলক তথ্য পরিবেশক ভারতীয় একটি কোম্পানি স্কাইমেট ওয়েদারের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম দ্য মিন্ট জানায়, এটি হবে চলতি বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া চতুর্থ ঘূর্ণিঝড়। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলা ও ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলো ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে প্রভাবিত হওয়ার পর নতুন এ সতর্কবার্তা এলো। পূর্বাভাস অনুসারে, ‘আগামী ২৭ নভেম্বর থাইল্যান্ড উপসাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত প্রবেশ করবে। ক্রমশ উত্তর পশ্চিমদিকে এগিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে। শক্তি বাড়িয়ে ২৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে ঘূর্ণাবর্তটি। আবহাওয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে এ ঝড় সৃষ্টি হওয়ার মতো অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানায় স্কাইমেট।’
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে চলেছে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়, যার নাম মিগজাউম। এর কবলে প্রভাবিত হতে পারে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের উপকূল।
আবহাওয়াবিদ সৌরিশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘রোববার (২৬ নভেম্বর) দক্ষিণ আন্দামান সাগরের কাছে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যা পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত। সেই সম্ভাব্য নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়িয়ে পরদিন সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।’
অন্যদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ) বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে আবারও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ও অনুকূল পরিবেশ পেলে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির বাংলাদেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা বেশি। উপকূলে আঘাতের সম্ভাব্য সময় ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ৩ তারিখ।’
গত অক্টোবরে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ সৃষ্টি হয়। পরে সেটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে। সবশেষ গত ১৪ নভেম্বর বঙ্গোপসাগর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরে সেটি শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়টি ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, ‘দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে। বঙ্গোপসাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা আগামী ২৯ নভেম্বর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আঘাত হানবে কি না, তা ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি দেখে পরবর্তীতে জানা যাবে।’
নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী শনিবার থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।