আমরা ২০৪১ সালে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্প বিপ্লব কিংবা আধুনিক বিশ্বে বাঁচতে হলে একেবারে মুখস্ত নির্ভর নয়, আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে জেনে, বুঝে, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে ক্রমাগতভাবে শিখতে হবে। আমাদেরকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে নতুন শিক্ষাক্রমের সংস্কার ও বাতিলের দাবী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম একেবারে রুপান্তর। আপনারা-আমরা কিন্তু একটি মুখস্ত বিদ্যার জগত পার করে এসেছি। আমরা যখন পড়াশুনা করেছি, তখন একটি নতুন প্রযুক্তি এসেছে ১০-১৫ বছর বিরতিতে। এখন ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা যে জগতে বড় হবে, সেখানে প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে তারপর নিজেদেরকে নেতৃত্বের জায়গায় এনে টিকে থাকতে হবে। আমরা কি সারা জীবন পিছিয়ে থাকব? নিশ্চয়ই না।
মন্ত্রী বলেন, এখন পৃথিবীতে মূল জিনিস হচ্ছে দক্ষতা। সেই কারণে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম রুপান্তর। এখন বিশ্বের অনেক দেশে এটি করেছে। বাকী দেশগুলো করবার চেষ্টা করছে। আমরা একটি খুব ভাল জায়গায় নিজেদেরকে নিয়ে আসতে ফেরেছি এবং এটি হুট করে হয়নি। ২০১৭-১৮ সালে অনেগুলো গবেষণার পর ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত হয়ে আজকে আমরা এই অবস্থায় এসেছি এবং এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, একটি দীর্ঘ সময় নিয়ে, অসংখ্য বিশেষজ্ঞদের কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের এই জায়গাটিতে এসছি এবং এটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। সুতরাং এটি নিয়ে যারা আজকে তথাকথিত আন্দোলন করছে, তাদের বেশীরভাগ কোচিং ব্যবসার সাথে জড়িত। যারা একেবারে স্কুল পর্যায় গিয়ে কমিশনে গাইড বই বিক্রি করেন, তারা এসবের সঙ্গে জড়িত এবং দু:খজনক হলেও সত্য কোন কোন শিক্ষকও এর সাথে জড়িত। অর্থাৎ যারা কোচিং করেন, নোট গাইডের ব্যবসায় জড়িত।
দীপু মনি বলেন, তারা যে দাবীগুলো করছেন এটি কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। তারা বলছে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল, সংস্কার কিংবা একটি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা চান। তাহলে আমরা যদি বলি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিব, তাহলে সংস্কার আর বাতিলের প্রয়োজন হবে না। ৫০ নম্বরের পরীক্ষা কেন? তাহলে আবার বাচ্চাদের কোচিংয়ে যেতে হবে পরীক্ষার প্রস্তুতির নামে। কাজেই তাদের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে কোচিং ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখা। এছাড়া আমরা তাদের যেসব দাবী এবং মিথ্যাচার সবগুলোর আমরা জবাব দিয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, তারা অনেক অভিভাবককেও বিভ্রান্ত করছেন। এত বড় রুপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা একটি বছর পার করে এসেছি। এটি কোন কম সময় নয়। আমাদের অভিভাবকরা অভ্যস্ত হবেন, শিক্ষকরা ক্রমাগত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন এবং প্রশিক্ষণ চলবে। কাজেই আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং বাস্তবায়ন হবে। কারণ আমাদের বইগুলো এখনো বলছি পরীক্ষামূলক সংস্করণ আমরা ক্রমাগত এর পরিমার্জন ও পরিশীলন করবো। কিন্তু এই পদ্ধতির পরিবর্তন হবে না। বইগুলো আরো উন্নত করা হবে।
বছরের শুরুতে বই পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি গণমাধ্যমে দুইরকম হেডলাইন দেখেছি। একটি বলছে ১ তারিখে বই দেয়া যাবে কোন শঙ্কা নেই, অপরটি বলেছে ১ তারিখে বই দেয়া নিয়ে শঙ্কা। কাজেই কিসের উপর ভিত্তি করে এই সংবাদ প্রকাশ করছেন এবং কেন করছেন আমি জানি না। আমরা এখনো আশাবাদি এবং বিশ্বাস করি সময়মত বই দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ এস এম মোসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বেপারী, সদর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক অ্যাড. হুমায়ুন কবির সুমনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।