স্থানীয় অর্থনীতিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধু পূর্বমুখী অর্থনীতির যোগাযোগ মাধ্যম নয় বদলে দিতে শুরু করেছে । তিন কিলোমিটারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি মোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যবসা–বাণিজ্য এখন দারুণ চাঙা। পর্যটন–বিনোদন, জায়গা–জমি, ব্যাংক এই তিন খাতে প্রভাব ফেলেছে সবচেয়ে বেশি। গড়ে উঠছে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের শাখা। আনোয়ারা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এক মাসে হয়েছে ১৫ কোটি টাকার জমি বিক্রির দলিল। আনোয়ারা প্রান্তে আধা কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে অঘোষিত বাসস্ট্যান্ড। ভ্রমণার্থীর চাপ সামলাতে টানেল হয়ে সিইপিজেড পর্যন্ত পাবলিক সার্ভিস চালুর রুট পারমিট চেয়েছে পিএবি সড়ক বাস মালিক সমিতি।
টানেল চালুর পর আনোয়ারা প্রান্তের পরিবর্তন এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ প্রান্তের কালাবিবির দীঘি বিকেলের পর থেকে বেড়াতে আসা লোকজনের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। এখানকার এক ডজন রেস্টুরেন্টে বেচাকেনায় দম ফেলার ফুরসত নাই। পতেঙ্গা প্রান্তের সমুদ্র সৈকতে তিন শতাধিক ভাসমান দোকানেও বেচাকেনা এখন দ্বিগুন। পারকি সমুদ্র সৈকতে অফ সিজনেও আসছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক। টানেল সংযোগ সড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে চালু হয়েছে পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা। চালুর অপেক্ষায় আছে আরো দুটি। কালাবিরিদীঘি এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক নতুন দোকান, রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক ল্যাব। আনোয়ারা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এক মাসে জমি বেচাকেনায় রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় ৫শ দলিল। এর ঘোষিত মূল্য ১৫ কোটি হলেও বাস্তবে হাত বদল হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। জানা যায়, টানেল চালুর পর শুধুমাত্র খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টে দৈনিক বিক্রি ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ারা প্রান্তের পাঁচ রেস্টুরেন্টে ১২ লাখ টাকা, পারকি সৈকতের ৪০ দোকানে প্রায় ৫ লাখ টাকা, পতেঙ্গা সৈকতের ২শ ভাসমান দোকানে ৩০ লাখ টাকারও বেশি বিক্রি হচ্ছে। বেড়াতে আসা লোকজনের চাপ সামাল দিতে আনোয়ারা প্রান্তের কালাবিবির দীঘি মোড়ে বসে গেছে অঘোষিত বাস স্টপেজ। এখানকার ২০টি বাস রাউন্ড ট্রিপে টানেলের ভেতর দিয়ে প্রায় ৮ হাজার মানুষকে পারাপার করছে। ভাড়া আদায় হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। মাইক্রোবাস ও কার ভাড়া করেও পার হচ্ছে কয়েকশ মানুষ। পিএবি সড়ক বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দর্শনার্থীর চাপ সামলাতে আনোয়ারা সদর থেকে ইপিজেড পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর জন্য ৩০টি বাসের পারমিট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
টানেলের বড় সুবিধা পাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তম পশুর হাট তৈলারদ্বীপ সেতু সংলগ্ন সরকার হাট। এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭ কোটি টাকা গরু বিক্রি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পশুবাহী ট্রাকগুলো সহজেই টানেল হয়ে সরকার হাট পৌঁছে যাচ্ছে। এতে জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি চাঁদাবাজিও কমেছে।
আনোয়ারা সদর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, টানেলকে ঘিরে সম্প্রসারিত নতুন ব্যবসায়িক এলাকা হয়ে উঠছে কালাবিবির দীঘি এলাকা। কেইপিজেডের ৩০ হাজার শ্রমিকের বৃহৎ অংশ এবং মানুষ চাতরী চৌমুহনীর যানজট এড়িয়ে কালাবিবির দীঘির টানেল সংযোগ সড়ক মোড় হয়ে চলাচল করছে। যাত্রী পারাপারের জন্য নিয়মিত দাঁড়িয়ে থাকছে ২০টির বেশি বাস। যতই দিন যাচ্ছে এই অংশের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাচ্ছে।
আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, টানেলের সুফল সুদূরপ্রসারী। ১০–২০ বছর পর বুঝা যাবে এটি কত বড় সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শী বলেই এমন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে বদলে যেতে শুরু করেছে পুরো এলাকা।