বাংলাদেশের বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে বিশ্বকাপ থেকে । এখন টাইগারদের লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার। সে লক্ষ্যেই সোমবার দিল্লিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে লড়াইয়ে নেমে ৩ উইকেটের সান্ত্বনার জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ের মাধ্যমে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখল সাকিবরা। টানা ৬ ম্যাচে হারের পর নিজেদের ৮ম ম্যাচে জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ। ম্যাচ জয়ের মূল ভিতটা গড়ে দিয়েছেন সাকিব ও শান্ত। ৮২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শ্রীলংকান ব্যাটার চারিথ আসালঙ্কা ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন।

আগামী ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অপরদিকে শ্রীলংকা খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ৯ নভেম্বর। উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছানোর জন্য পুরো আয়োজন প্রস্তুত করেছিলেন সাকিব-ম্যাথুসরা। যে ম্যাথুসের সঙ্গে এতকিছু, তার বলেই উইকেট দিয়ে বিদায় নেন সেঞ্চুরির পথে থাকা সাকিব-শান্ত দুজনেই। তাদের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিম ও ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আউটে ম্যাচ আরও নাটকীয় হয়ে ওঠে। মনের গহিনে শঙ্কাও জেগে ওঠে বলে, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ খুইয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হতে দেননি তাওহিদ হৃদয়রা। ক্রিজে নামার পর তাকে উদ্দেশ্য করে চারিথ আসালাঙ্কাকে কিছু বলতে দেখা যায়।

২৮০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ফিরেন তানজিদ হাসান তামিম। দলীয় ১৭ রানের মাথায় দিলশান মদুশঙ্কর বলে কভারে পাথুম নিসাঙ্কার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ৫ বল খেলে ২ চারে ৯ রান আসে তানজিদের ব্যাট থেকে।

তানজিদের বিদায়ের পর বেশ আশা জাগাচ্ছিলেন লিটন দাস। কাসুন রাজিথাকে ডিপ স্কয়ার লেগ ও ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে দুটি ছক্কায় উড়িয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপর পায়ের পেশিতে টান খান। ছন্দ হারান। শেষ পর্যন্ত দলীয় ৪১ রানের মাথায় দিলশান মদুশঙ্কর ইয়র্কারে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ২২ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ রান করে যান তিনি।

বিশ্বকাপে রান না পাওয়া সাকিব ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৮ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হলো তাকে। তাও আবার সেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বলে আউট হয়ে। ৩২তম ওভারের প্রথম বলটিই ম্যাথুস গুড লেন্থে করেন। সাকিব আগে-ভাগেই ফ্লিক করে বসেন। কিন্তু বল তার ব্যাটে লেগে উপরে উঠে যায়। মিড-অফে দৌড়ে গিয়ে চারিথ আসালঙ্কা সেটা লুফে নেন। মাত্র ৬৫ বলে ১২টি চার ও ২ ছক্কায় ৮২ রান করে ফেরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

সাকিবের চেয়ে বেশি আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন শান্ত। এবারের বিশ্বকাপে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা শান্ত অবশেষে রান পেলেন। ৯০ রান করে ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু দলীয় ২১১ রানের মাথায় অ্যাঞ্জেলো মাথুসের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ম্যাথুসের বলে ইনসাইড এজ হয়ে ফেরেন ১০১ বলে ১২ চারে ৯০ রান করে।

এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তবে ৫ম উইকেটে মুশফিকুর রহিম মাত্র ১০ রান নিয়ে ফিরে যান। মাঠে নামেন তাওহিদ হৃদয়। সবাইকে হতাশ করে মাহমুদউল্লাহ পরাস্ত হন ২২ রানে। পরে তাওহিদ হৃদয় ১৫* ও তানজিম সাকিব ৫* দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

আগে ব্যাটিং পেয়ে নির্ধারিত ৪৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রান করে শ্রীলংকা। এদিন সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন আসালাঙ্কা। ওডিআই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। ১০৫ বলে ৬ চার ও ৫ ছয়ে ১০৮ রান করে তানজিম সাকিবের শিকারে পরিণত হন চারিথ আসালাঙ্কা।
‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ব্যাটিং উইকেটে টস জিতে শ্রীলংকাকে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে শুরুতেই অবাক করে দেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে অন্য এক ঘটনা। ‘টাইমড আউট’ নামে অদ্ভুত এক আউট হয়েছেন লঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস।

এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলংকা। শরিফুল ইসলামের বলে দুর্দান্ত এক ডাইভে কুশল পেরেরার (৪) ক্যাচ ধরেন মুশফিকুর রহিম। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দ্রুতই রান তুলছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। বাধ্য হয়ে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন অধিনায়ক সাকিব। চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নামা পেসার তানজিম হাসান সাকিবের হাতে বল তুলে দেন তিনি।

১২তম ওভারে নিজেই বল হাতে তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। তাতেই বাজিমাত। ওভারের তৃতীয় বলে কুশল মেন্ডিসকে শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। ৩০ বলে ১৯ রান করেন লঙ্কান দলপতি। মেন্ডিসের বিদায়ের পর আর টেকেননি নিশাঙ্কাও। তাকে বোল্ড করে বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটের দেখা পান তানজিম সাকিব। এর আগেই বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য উইকেট পাওয়ার কাছে চলে গিয়েছিলেন তানজিম। তার বল ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারিও পেয়েছে শ্রীলংকা। তবে তার অফস্টাম্পের একটু বাইরের হঠাৎ লাফিয়ে উঠলে নিশাঙ্কার ব্যাটে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে। ৩৬ বলে ৮ চারে ৪১ রান করেন তিনি।

নতুন দুই ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চরিথ আসালাঙ্কা আরও একটি জুটি গড়েন। এই জুটিতে ৬৩ রান যোগ করেন তারা। ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটিও ভাঙেন সাকিব। ৪২ বলে ৪১ রান করে সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন সামারাবিক্রমা।

এরপরই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। ক্রিজে ভুল হেলমেট নিয়ে এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ফিতা ছেঁড়া থাকায় সেই হেলমেট বদলে নতুন একটি হেলমেট নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেটিও খেলায় ব্যবহারের উপযোগী মনে করেননি এই অলরাউন্ডার। সময় ক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ এ সময় আউটের আবেদন জানালে তাকে আউট দেন আম্পায়ার। ম্যাথুসই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘টাইমড আউট’ হলেন।

এমসিসির আইনের ৪০.১.১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ‘একজন ব্যাটসম্যানের আউট হয়ে যাওয়া বা অবসরের পর যে ব্যাটসম্যান আসবেন, তাকে অথবা অন্য ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। অন্যথায় যে ব্যাটসম্যান নামছেন, তাকে আউট হতে হবে।’ ম্যাথুস কোনো বল না খেলেই সাজঘরে ফেরার পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি গড়েন চরিথ আসালাঙ্কা। এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন ডি সিলভা। ৩১ বলে ৩ চারে ২২ রান করে শরিফুলের বলে আউট হয়েছেন মাহেশ থিকসানা।

বাংলাদেশের পক্ষে সফলতম বোলার তানজিম সাকিব। ১০ ওভারে ৮০ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। সাকিব ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। ২ উইকেট শিকার করেছেন শরিফুলও। বাকি উইকেটটি মিরাজের ঝুলিতে গেছে।

এদিকে ইনিংস শেষে ম্যাথুসের আউট নিয়ে কথা বলেন লঙ্কানদের হয়ে শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান আসালাঙ্কা। তিনি বলেন, ‘অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে যা ঘটেছে তা ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলংকা:৪৯.৩ ওভারে ২৭৯ (পাথুম নিশাঙ্কা ৪১, কুশল পেরারা ৪, কুশল মেন্ডিস ১৯, সাদিরা সামারাবিক্রমা ৪১, চারিথ আসালঙ্কা ১০৮, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ০, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ২২, মহেশ থিকসানা ২২, দুশমন্থ চামিরা ৪, কাসুন রাজিথা ০, দিলশান মধুশঙ্কা ০*; শরিফুল ইসলাম ২/৫২, সাকিব আল হাসান ২/৫৭, তানজিম হাসান সাকিব ৩/৮০, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৪৯)।

বাংলাদেশ:৪১.১ ওভারে ২৮২/৭ (তানজিদ হাসান ৯, লিটন ২৩, নাজমুল শান্ত ৯০, সাকিব ৮২, মুশফিকুর রহিম ১০, মাহমুদউল্লাহ ২২, তৌহিদ হৃদয় ১৫*, মেহেদী মিরাজ ৩, তানজিম সাকিব ৯*; দিলশান মদুশঙ্ক ৩/৬৯, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ২/৩৯, থিকসানা ২/৪৪)

ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031