আজ দ্বিতীয় ধাপে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে ১১ সেট রেল চলাচল করলেও মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার পর ২৪ সেট রেল চলাচল করবে। এতে পূর্ণতা পাচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। রাজধানীতে চিরচেনা যানজটে পড়তে হবে না বলে আশা নগরবাসীর। যানজটের নগরীতে ভরসা হয়ে উঠছে মেট্রোরেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (শনিবার) দুপুর আড়াইটায় আগারগাঁও স্টেশন থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন। এরপর আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিল স্টেশনে যাবেন তিনি। সেখান থেকে আরামবাগ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে শনিবার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত মেট্রোরেলের চলাচলও বন্ধ থাকবে। পরদিন রোববার থেকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা।
এদিকে, তিলোত্তমা ঢাকায় ‘লক্কড়ঝক্কড়’ গণপরিবহণের কাছে অসহায় সাধারণ যাত্রীরা। বেশি ভাড়ার কারণে ট্যাক্সি ও অটোরিকশা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তাই প্রতিদিন ভোগান্তি যেন নিয়তি। যানজটে অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকায় রোগীর মৃত্যু ও আটকে থাকা গাড়িতে সন্তান প্রসবও দেখেছেন রাজধানীবাসী। ঢাকা শহরের যানজটের জন্য বার্ষিক ৪.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয় যা জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশের বেশি।
ঢাকাবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে সরকার স্বপ্নের মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, দৃষ্টিনন্দন উড়াল সড়ক, টানেল নির্মাণ, থার্ড টার্মিনাল, কক্সবাজার রেললাইনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। দুর্বিষহ যানজট নিরসনের স্বপ্ন পূরণে আধুনিক গণপরিবহণ মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকেই যাত্রী চলাচল শুরু হয়, দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেন ঢাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয় গণপরিবহণ হয়ে উঠেছে। অফিসগামী যাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ যানজটের এই নগরীতে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে এখন মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন।
ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এবার চালু হতে যাচ্ছে পুরো পথে যাতায়াতের সুবিধা। আগামী রোববার থেকে উত্তরা হতে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা। পুরো পথ যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩৩ থেকে ৩৮ মিনিট। মেট্রোরেলের দ্বিতীয় অংশে ৬টি স্টেশন থাকলেও প্রথম দিকে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন চালু হবে। নভেম্বরের শেষ দিকে চালু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন। বাকি তিনটি স্টেশন বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ চালু হবে পর্যায়ক্রমে।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান, প্রধানমন্ত্রী আজ দুপুর আড়াইটায় আগারগাঁও স্টেশন থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন। তারপর মতিঝিল স্টেশনে আরেকটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য তিনি মেট্রোরেলে মতিঝিলের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। প্রধানমন্ত্রী এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন। এই লাইন হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার হবে। ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে আজ শনিবার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকবে। রোববার থেকে প্রতিদিন মেট্রোরেল মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উভয় দিকে চলাচল করবে। শুধু উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।
এম এ এন সিদ্দিক জানান, জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের ১.১৬ কিলোমিটার পথ বাড়ানো হচ্ছে। বর্ধিত অংশ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। প্রতিটি ট্রেন ২,৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। প্রতি চার মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন আসবে। এখন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে দিনে চলাচল করছে ৯০ হাজার যাত্রী।
তিনি আরও জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। উত্তরা থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ পর্যন্ত ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া ৫০ টাকা, আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা, আগারগাঁও-বিজয় সরণি পর্যন্ত ৬০ টাকা, ফার্মগেট ৭০ টাকা, কারওয়ান বাজার-শাহবাগ ৮০ টাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেস ক্লাব (সচিবালয়) পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা।
জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে চুক্তি সই হয়। প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের কথা ছিল। যাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় সেটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।