আগামী ৫ নভেম্বর থেকে রাজধানীর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেল চলাচল করবে । এর আগে আগামী ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের লাইন ৬-এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেভাবে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছিল, একই ভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটে দৈনিক চার ঘণ্টা চলবে মেট্রোরেল। ৫ নভেম্বর থেকে সর্বসাধারণের জন্য আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ খুলে দেওয়া হবে। এ অংশে শুরুতে তিনটি স্টেশন চালু রাখা হবে। পরে ধাপে ধাপে বাকি স্টেশনগুলো খুলে দেওয়া হবে।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে মেট্রোরেল কার্যালয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ৪ নভেম্বর উদ্বোধনের জন্য ওইদিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল চলাচল। ৫ নভেম্বর থেকে আবার চালু হবে। উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী একটি ট্রেন উদ্বোধন করবেন এবং পরের ট্রেনে চড়ে মতিঝিল যাবেন। সেখানে এমআরটি নর্দান রুটের কাজের উদ্বোধন এবং এমআরটি ৫-এর ফলক উন্মোচন করবেন তিনি।
এম এ এন ছিদ্দিক জানান, আগামী ৫ নভেম্বর থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উভয় দিকে ১০ মিনিট পর পর মেট্রোরেল চলাচল করবে। বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে শুধু ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে বলে জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।
তিনি বলেন, তবে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তর অংশে মেট্রো ট্রেনের সময় ও অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকবে।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের কথা ছিল গত ২০ অক্টোবর। পরে সেটি ৯ দিন পিছিয়ে ২৯ অক্টোবর করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর শিডিউলজনিত কারণে ২৯ অক্টোবরের পরিবর্তে ৪ নভেম্বর এ অংশের উদ্বোধনের দিন ঠিক করা হয়েছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার। যাত্রী সুবিধার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রুট বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত অংশের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ।
২০১২ সালের জুলাই মাসে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। যদিও পরে মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার (২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার)। এর মোট ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণ থেকে ব্যয় হচ্ছে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোরেল প্রকল্পের পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন করেন। ওইদিন তিনি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন।
এর একদিন পর ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ যাত্রীদের পরিবহনের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় মেট্রোরেল। শুরুতে বিরতিহীনভাবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চললেও যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় গত ৫ এপ্রিল থেকে দুই ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিনই চালু হয় উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশন দুটি। এরপর একে একে আরও দুটি স্টেশন চালু হয়। এর মধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি পল্লবী স্টেশন ও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরা সেন্টার স্টেশন এবং ১ মার্চ পঞ্চম স্টেশন হিসেবে চালু হয় ব্যস্ততম মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন। গত ১৫ মার্চ মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশন দুটিও চালু হয়। সবশেষ গত ৩১ মার্চ মেট্রোরেলের শেওড়াপাড়া ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন দুটিও খুলে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনই যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হয়।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হওয়ার পর প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ উড়াল ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে।