পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা মন খুলে কথা বলেছেন তাদের এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে।  পাসপোর্ট অফিসে একেকজনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা। কেউ সব কাগজপত্র জমা দিয়েও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না এক বছর হয়ে গেল। কারও পুলিশ প্রতিবেদন ভালো আসেনি বলে পাসপোর্ট মেলেনি। পরে পুলিশকে আবার ঘুষ দেয়ার পর ঠিক হয়ে যায় সব। এ রকম আরও কত কী অভিযোগ।
ভুক্তভোগীরা জানান, পুলিশ ভেরিভেকেশন প্রতিবেদন দিতে হয়রানি আর ঘুষ, নামের বানান সংশোধনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা আর পদ্ধতিগত ত্রুটি, পাসপোর্ট ডেলিভারি, ছবি সত্যায়িত করতে গিয়ে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বীকার হন তারা।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরে গণশুনানিতে এসব অভিযোগ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার, পুলিশ আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় আগারগাওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ২৫ জন ভুক্তভোগী বলেন তাদের বাজে অভিজ্ঞতার কথা।

পাসপোর্ট নিতে ভোগান্তির শিকারদের একজন আরিফুর রহমান থাকেন ঢাকার সাভারে। তিনি জানান, ছোট বোনের কিডনি সমস্যার কারণে ভারত যেতে পাসপোর্ট করতে চেয়েছিলেন তিনি। সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পর তাকে ৯ জুন পাসপোর্ট নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হাতে পাওয়া যায় ২২ জুলাই। এ জন্য পুলিশ প্রতিবেদনও নিজেই যোগাড় করে দিয়েছেন আরিফুর। কিন্তু বোনকে নিয়ে আর ভারতে যাওয়া হয়নি।

রাজধানীর দয়াগঞ্জের জুয়েল জানান, তিন বছর আগে ব্যাংকে টাকাসহ ফরম জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাসপোর্ট পাচ্ছিলেন না। যোগাযোগ করলে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা তাকে জানান, পুলিশ ভেরিভেকেশন রিপোর্ট ভাল আসেনি। জুয়েল বলেন, ‘তারপর আবার পুলিশের কাছে যাই। তখন পুলিশ বলে, ১০ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা দেয়ার পর আমার পক্ষে পুলিশ ভেরিভেকেশন রিপোর্ট দিয়েছে।’

মনির হোসেন বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের পাসপোর্ট করতে দিয়ে আমি অনেক সমস্যায় পড়েছি। একবার পুলিশের কাছে আর একবার পাসপোর্ট অফিসে আমাকে যেতে হয়েছে। তারপরও পাসপোর্ট পাইনি।’

ভুক্তভোগী নাজমা বেগম জানান, এক বছর ধরে পাসপোর্ট অফিস ঘুরেও তিনি পাসরেপার্ট পাননি। পরে মজিবুর রহমান নামে এক দালালকে সাত হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। সেই দালালও চার থেকে পাঁচ মাস ঘুরাচ্ছে।

মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী নামে একজন বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদপ্তরে প্রতিটি দ্বারে দ্বারে দুর্নীতি। এখনে আনসার থেকে শুরু করে পিওন পর্যন্ত সবাই টাকা খায়।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কামরুন নেছা বলেন, তার মেয়ে জামাই একজন বিদেশি নাগরিক। তিনি ভিসা চেয়েছেন এক মাসের। আবেদন করেছেন ফেব্রুয়ারি মাসে। আর তাকে ভিসা দেয়া হয় ২৪ জনু। ইতিমধ্যে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

ভুক্তভোগী আবিদা সুলতানা এবি বলেন, পাসপোর্টে অফিসে প্রতিটি পদে পদে টাকা নেয়া হয়। কাউকে অভিযোগ দিলেও অভিযোগ গ্রহণ করেন না বরং তারা উল্টো ভয় দেখান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল, মহাপরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও মো. শামসুল আরেফিন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031