চট্টগ্রাম শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি মন্তব্য করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামকে যার যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছে। চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে সমন্বয় প্রয়োজন। আমি দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টকে ডেকে আলাপ–আলোচনা করে সমন্বয়ের মাধ্যমে শহরকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। এই ব্যাপারে আমার পার্সোনাল কোনো ইগো নেই। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসমেকের উদ্যোগে ‘বাণিজ্যিক শহর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা নিরসন, পর্যটন শিল্প গড়ে তোলাসহ মহানগরের সৌন্দর্যবর্ধন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। টাইগারপাসে নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সভা হয়।
মেয়র বলেন, সবাই আলাপ–আলোচনা করলে প্রত্যেক কাজে সাফল্য আসবে। যেমন জলাবদ্ধতা নিয়ে সবাই কথা বলে। বিশাল একটা জনগোষ্ঠী জলাবদ্ধতায় কষ্ট পায়। বারবার বলেছি, এখানে সমন্বয়হীনতা আছে। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ এবং বিশেষজ্ঞরা বসে পরিকল্পনা করে যদি জলাবদ্ধতার বিষয়ে এগুতাম তাহলে এত কষ্ট হয়তো পেতাম না। আমরা বলি, কিন্তু বাস্তবায়নে যায় না। এটা কি ইগোর সমস্যা? নাকি আলোচনা করতে আমার ডিপার্টমেন্ট একটু নিচু হয়ে যাচ্ছে, এমন সমস্যা? আমরা তো সবাই চট্টগ্রাম নিয়ে চিন্তা করি। আসেন না সব চিন্তা এক জায়গায় এনে কার্যকর করি। তাহলে কিন্তু এত কথা উঠবে না। সবার চিন্তার প্রতিফলন এক হলে শহরকে সাজাতে পারব।
তিনি বলেন, সামুুদ্রিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগাতে ওশান এমিউজমেন্ট পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রস্তাবটি পাঠানোর পর মন্ত্রণালয়ে এনকোয়ারি দিয়েছে। দ্রুতই এটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, চান্দগাঁওয়ে স্পোর্ট জোন গড়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়ার্ডে পতিত ভূমিতে খেলার মাঠ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। বাটালি হিলে চট্টগ্রাম ওয়াচ টাওয়ার করার প্রস্তাব ঢাকায় পাঠিয়েছি। রেলমন্ত্রীর সাথে দেখা করে জানিয়েছি, জোড়ঢেবা, ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ রেলের অধীনে অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ওয়াটার বডি রয়েছে। আমি বলেছি, চসিকের মালিকানার দরকার নাই, আপনারা আমাকে ভূমি দিন, চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে সেখানে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে দেব।
এসমেকের ডিরেক্টর অব আর্কিটেকচার আনন্দ এস লোরেম্বাম, (বি আর্চ) শহরের সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসমেকের প্রধান ডিজাইনার (পরিবহন বিভাগ) সুজয় সুজাতারন, চট্টগ্রাম মহানগরের ট্রাফিক সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে কোনো দায়িত্ব দিলে সেটা বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে। কিন্তু একাধিক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ একেক মন্ত্রণালয় একেক কথা বলে।
সভায় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম নগরে চসিকের চলমান উন্নয়নযজ্ঞ তুলে ধরেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনে রাস্তা বড় করার জন্য ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কীর্তিমান চাকমা বলেন, কদমতলীতে রেলের বারের জন্য দিনে ২৮–২৯ বার যানজট হয়। প্র্রতিবার ৫ মিনিট হলেও কত সময় নষ্ট হচ্ছে।
সভায় বক্তব্য রাখেন এসমেক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. জনার্দন সুন্দরম, আইইবি চট্টগ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন, আইইবি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশীদ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এস্টেট অফিসার সুজন চৌধুরী, এলজিইডির সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, সিডিএর মাস্টার প্ল্যান পরামর্শক মো. নুরুল হাসান প্রমুখ।