বাংলাদেশ স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ শুরুর পর দ্বিতীয় ম্যাচেই হারের লজ্জা পেল । ব্যাটিং–বোলিং ব্যর্থতায় নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান করে ইংল্যান্ড।
১০৭ বলে ১৪০ রান করেন ডেভিড মালান। জবাবে পেসার রিচ টপলির বোলিং তোপে ১০ বল বাকী থাকতে ২২৭ রানে গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন লিটন। টপলি ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে ডান হাতি স্পিনার মাহেদি হাসানকে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা কাজে লাগান ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। ১৭ ওভার পর্যন্ত ছয় বোলার ব্যবহার করে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন না অধিনায়ক সাকিব। অবশেষে ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে বেয়ারস্টোকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাকিব। তবে আউট হওয়ার আগে ৮টি চারে ৫৯ বলে ৫২ রান করেন বেয়ারস্টো। মালান–বেয়ারস্টো জুটিতে ১০৭ বলে ১১৫ রান যোগ করেন। বেয়ারস্টো ফেরার পর ক্রিজে আসেন জো রুট। মালানকে নিয়ে বড় জুটির লক্ষ্য সাবধানে খেলতে থাকেন রুট। ৩২তম ওভারে সাকিবের বলে ১ রান নিয়ে ২৩তম ওয়ানডেতে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান।
এরপর বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন মালান। পরে মাত্র ১৫ বলে ৪০ রান তুলেন তিনি। ৩৮তম ওভারে মাহেদির বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন এই বাঁ–হাতি। ১৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৭ বলে ১৪০ রান করেন তিনি। মালানের সাথে জুটিতেই হাফ–সেঞ্চুরি করেন রুট। দলীয় ২৬৬ রানে মালান ফেরার পর ইংল্যান্ডের রানের লাগাম টেনে ধরেন পেসার শরিফুল ও স্পিনার মাহেদি। পরের দিকে শরিফুল–মাহেদি সমান ৩টি করে উইকেট নেন। ৪০তম ওভারে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলারের উইকেট উপড়ে ফেলেন শরিফুল। ৪২তম ওভারে পঞ্চম বলে আউট হন রুট। ৬৮ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮২ রান করেন রুট। ওভারের শেষ বলে লিয়াম লিভিংস্টোনকে বিদায় দেন শরিফুল। শরিফুলের মতো শেষ দিকে ৩ উইকেট শিকার করেন মাহেদিও। হ্যারি ব্রুককে ২০, স্যাম কারানকে ১১ ও আদিল রশিদকে ১১ রানে আউট করেন মাহেদি। শরিফুল–মাহেদির দারুণ বোলিংয়ে ইনিংসের শেষ ৬২ বলে ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড।
বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে মাহেদি ৪টি, শরিফুল ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া তাসকিন ও সাকিব ১টি করে উইকেট নেন। উইকেট শূন্য ছিলেন মোস্তাফিজ ও মিরাজ। ৩৬৫ রানের পাহাড় টপকানোর লক্ষে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই পেসার ওকসের পরপর তিন বলে তিনটি চার মারেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস। পরের ওভারে বল হাতে আক্রমনে আসেন বাঁ–হাতি পেসার রিচ টপলি। চতুর্থ বলে দ্বিতীয় স্লিপে বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দেন ২ বলে ১ রান করা আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান।
এরপর উইকেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টপলির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দেন তিনি। খালি হাতে ফিরেন শান্ত। উইকেটে আসেন সাকিব। টপলির হ্যাট্রিকের সুযোগ রুখে দিলেও, ষষ্ঠ ওভারে বিদায় ঘণ্টা বাজে সাকিবের। সেই টপলির বলে বোল্ড হন ৯ বলে ১ রান করা সাকিব। এতে ৩৪ বলে ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ওকসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৮ রানে মিরাজ ফিরলে ৪ উইকেটে ৪৯ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পতন ঠেকানোর দায়িত্ব নেন লিটন ও নতুন ব্যাটার মুশফিকুর। কিন্তু ২১তম ওভারে ওকসের বলে উইকেটরক্ষক বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন। লিটন ৭৬ রান করেন। মুশফিকের সাথে ৭৫ বলে ৭২ রান যোগ করেন তিনি। দলীয় ১২১ রানে লিটন ফেরার পর তাওহিদ হৃদয়ের সাথে ৪৩ রানের জুটি গড়ার পথে অর্ধশতকের দেখান পান মুশফিক। হাফ–সেঞ্চুরির পর টপলির চতুর্থ শিকার হন ৪টি চারে ৬৪ বলে ৫১ রান করা মুশফিক। দলীয় ১৬৪ রানে মুশফিক ফেরার পর পুরো ৫০ ওভার খেলতে টেস্ট মেজাজে লড়াই শুরু করে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০ বল বাকী থাকতে ২২৭ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। হৃদয় ৩৯, মাহেদি ১৪, তাসকিন ১৫, শরিফুল ১২ ও মোস্তাফিজ অপরাজিত ৩ রান করেন। ইংল্যান্ডের টপলি ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন। আগামী ১৩ অক্টোবর চেন্নাইয়ে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।