কোনো জীবাণু খুঁজে পাওয়া যায় না মানসিক রোগে । আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও মহামারিসহ নানা কারণে অসমতার শিকার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হিসেবে দেখা হয়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ যৌথ জরিপ অনুযায়ী দেশে অন্তত ৩ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আছেন বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ৮ ভাগ আর তরুণদের বেলায় তা ১৩ ভাগ।

এমন বাস্তবতায় আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছর ১০ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বরাবরের মতো আলোচনা অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালনের কথা রয়েছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের অধিকার’। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সমস্যা আর রোগ কিন্তু এক নয়। সমাজে ধর্ম, বর্ণ, আর্থিক অবস্থা, শারীরিক অবস্থা নানা কিছু নিয়ে অসমতা ও বৈষম্য রয়েছে। দিন শেষে এগুলোই মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। তবে মানসিক স্বাস্থ্য যখন খারাপ হয়, তখন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আর এর যথাযথ চিকিৎসা না হলে তা রোগে রূপান্তরিত হয়।

তারা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নানা কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্থসামাজিক কারণ ছাড়াও বর্তমানে যে হারে নগরায়ণ হচ্ছে তা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চাপ তৈরি করছে। যা অন্যান্য রোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু এ সমস্যায় আক্রান্তরা বুঝতেই পারে না তারা মানসিক সমস্যা নিয়ে চলছেন। তাই ব্যক্তি সচেতনতার পাশাপাশি প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টার্শিয়ারি এই তিন ধরনের মানসিক সেবা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।

এদিকে মানসিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে অবহেলার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের জন্য রয়েছে চিকিৎসক সংকটও। দেশে প্রায় প্রতি তিন লাখ মানুষের বিপরীতে মাত্র একজন মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসক রয়েছেন। ফলে ৯১ শতাংশই চিকিৎসা বঞ্চিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপের বরাদ্দ দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য সেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান লাইট হাউস। সোমবার রাজধানীতে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত এক মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় মূল প্রবন্ধে লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, করোনা মহামারির পর দেশের মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আরও বেড়েছে। তবে বাড়েনি এ রোগের চিকিৎসা বাজেটের বরাদ্দ। মাত্র দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ব্যয় হয় এ খাতে। ফলে আক্রান্ত প্রায় ৯১ শতাংশ মানুষ সেবা বঞ্চিত হয়।

অনুষ্ঠানে ডা. মো. মনজুর হোসাইন বলেন, আগের থেকে দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। তবে আমাদের দেশে মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা কম। মাত্র ২৭০ জন মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এর একটি জটিল, অন্যটি লঘু। লুঘু ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের সংখ্যাটাই বেশি। সহমর্মিতার সঙ্গে এই সমস্যার চিকিৎসা করা হলে বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু সামাজিক নানা কারণে মানসিক অসুখ গোপন করার ফলে রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হন। ফলে দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সামাজিক সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031