আওয়ামী লীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক পরিবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, একটি মহীরুহ–যা খরতপ্ত দুপুরে বাংলার মানুষকে বার বার ছায়া দিয়েছে এবং ঝড়–বৃষ্টি বাদলের বিভিন্ন প্রতিকূল সময়ে মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। এই মহীরুহের অনেক ডাল–পালা রয়েছে, এ ডালপালার মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত জননেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আতাউর রহমান খান কায়সারের মতো বলিষ্ঠ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আবার এই ডালপালায় খোন্দকার মোশতাক আহমেদের মত কিছু শকুনও বাসা বেঁধেছিল। এজন্য আওয়ামী লীগকে মাসুল দিতে হয়েছে। এখনো এই শকুনিরা মহীরুহের ডালপালায় ঘাপটি মেরে আছে। তাদের কাছ থেকে সাবধান।
গতকাল সোমবার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক কূটনীতিক ও আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মতিয়া চৌধুরী আরো বলেন, পঁচাত্তরের পনের আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগ এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের চাহিদা পূর্ণ করেছেন। এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার পূর্ণ হওয়ায় মানুষ এখন মানুষের মর্যাদা পাচ্ছে। আনন্দের বিষয়, ফকির–মিসকিনরা এখন পান্তাভাত খেতে চায় না। তাই আমরা খুশী। এজন্যই তো শেখ হাসিনা রাজনীতি করছেন শুধু ক্ষমতার জন্য নয় জনকল্যাণের জন্য। শিক্ষার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি বিস্ময়কর। পৃথিবীর কয়টা দেশে বছরের প্রথমদিনেই শিক্ষার্থীরা বই উৎসব উদযাপন করে, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীরা সেই বই বাড়িতে নিয়ে যায়? এটা শেখ হাসিনার অনন্য উপহার। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই ক্লিনিক থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ২২ টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার নজির স্থাপন করেছে। আজকে আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশ দুর্দান্তনীয়ভাবে এগিয়ে চলেছে। এখান থেকে পেছনে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যদিও ষড়যন্ত্র হচ্ছে, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আমাদের গতি কেউ রোধ করতে পারে নাই, শেখ হাসিনার গতি কেউ রোধ করতে পারবে না।
মতিয়া চৌধুরী সারাবিশ্বে শেখ হাসিনার বিজয় অভিধা ও সুনাম প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, তিনি আজ সারাবিশ্বে একজন মর্যাদাবান দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত। তিনি যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা এবং বাংলার মাটি শেখ হাসিনারই জন্য। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কখনো জনবিচ্ছিন্ন হবেন না। জনবিচ্ছিন্নতা নিজের পতনের বড় স্খলন। আমাদের সকলের একমাত্র লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর। তাহলে উন্নত দেশ হিসেবে আমাদের স্বপ্ন ও প্রাপ্তির ষোলকলা পূর্ণতা পাবে।
আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেছেন, রাজনীতি সবাইকে নিয়ে করতে হয়। রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম না থাকলে, সাধারণ মানুষের প্রতি দরদ না থাকলে, লোভ পরিহার করতে না পারলে রাজনীতি হয়না। আমার পিতা সেই শিক্ষা আমাকে দিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনার পক্ষে কায়সার ভাই ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, সময়টা খুব কঠিন ছিল। তখন আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না, এখন আমরা ক্ষমতায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, আতাউর রহমান খান কায়সার আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে অভিভাবকের ভূমিকায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি দলের অভ্যন্তরীণ মতভিন্নতা নিরসনে একজন অন্যতম অনুঘটক ছিলেন। আজকের দিনে তাঁর মত রাজনীতিকের শূন্যতা রয়েছে।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেছেন, পদ্মা সেতুর উপর শুধু আওয়ামী লীগের লোকজন আসা–যাওয়া করে না, বিএনপির নেতাকর্মীরা এই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য আসা–যাওয়া করে থাকেন। এই বিষয়গুলো তাদের বুঝতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরো বক্তব্য দেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ সহ–সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সহ–সভাপতি অধ্যাপক মাঈনুদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগ সহ–সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা সহ সভাপতি অ্যাড. মুজিবুল হক, বদিউল আলম, মোসলেহ উদ্দিন মনসুর, দেবাশীষ পালিত, শফর আলী, কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা প্রমুখ।এর আগে সকালে আতাউর রহমান খান কায়সারের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।