চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় নগরের আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে ‘পে–পার্কিং’ (টাকার বিনিময়ে পার্কিং) চালু করতে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ‘ট্রেড ম্যাক্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে । একই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এর অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজের উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) একই উদ্যোগ নেয়। তখন চসিক, নগরপরিকল্পনাবিদ এবং সিএমপি’র আপত্তিতে তা কার্যকর হয়নি। এ অবস্থায় জটিলতা কাটিয়ে আবারও পে–পার্কিং চালুর উদ্যোগ নেয় চসিক। তবে এবার কেবল ফ্লাইওভারের নিচে নয়। এর সঙ্গে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে পে–পার্কিং চালু করা হবে। এ পে–পার্কিংয়ের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণে দুয়েকদিনের মধ্যে জরিপ শুরু করবে চসিক। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এ বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে সিএমপিকেও সম্ভাব্য স্থানের একটি তালিকা করতে বলেছেন মেয়র। পরে চসিক ও সিএমপির প্রণীত দুটো তালিকা সমন্বয় করে স্থান নির্ধারণ করা হবে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারের মাধ্যমে পে–পার্কিং পরিচালনা করবে চসিক। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সহযোগী হিসেবে সিএমপিকে পে–পার্কিং থেকে আয়ের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রদান করা হবে। বাকি অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং চসিক পাবে। এমন পরিকল্পনা করেই পে–পার্কিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে চসিক। পে–পার্কিং প্রসঙ্গে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করব। জিইসি মোড় ও আগ্রাবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এটা চালু করা যেতে পারে। আমাদের প্রকৌশল বিভাগকে বলে দিয়েছি সম্ভাব্য স্থানের তালিকা করতে। সিএমপিও একটি তালিকা করবে। পরে উভয়ে (চসিক–সিএমপি) বসে সমন্বিতভাবে তালিকা করে চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে পে–পার্কিং নিয়ে ‘ট্রেড ম্যাঙ’র সঙ্গে চসিকের চুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আগের চুক্তি বিষয় না। এখন বাস্তবতার আলোকে যেটা উপযোগী তা করা হবে। সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে সৌন্দর্যবর্ধনে ট্রেড ম্যাঙ চুক্তি করে, পে–পার্কিং ওই চুক্তির অংশ। ট্রেড ম্যাঙ একটি সার্ভে করেছিল আমরা সেটি ভেটিং করব। পাশাপাশি প্রধান সড়কে নতুন করে সার্ভে (জরিপ) করব।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে পে–পার্কিংয়ের অবকাঠামোগত কার্যক্রম উদ্বোধনের পরদিন ১১ ফেব্রয়ারি নগর পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান স্বাক্ষরে আপত্তি জানিয়ে চসিককে চিঠি দেয়া হয়। এরপর একই বছরের আগস্ট মাসে চসিকের প্রশাসক পদে দায়িত্ব নেন খোরশেদ আলম সুজন। তখন ওই মাসে আরেকটি চিঠি দেয় সিএমপি।
সিএমপির দুটো চিঠিতে পে–পার্কিংয়ে আপত্তির কারণ হিসেবে বলা হয়, ফ্লাইওভারের নিচে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পে–পার্কিং করা হলে কিছু প্রতিষ্ঠান সবসময় পে–পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে স্থায়ীভাবে রাস্তাকে নিজেদের পার্কিং স্থান হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেবে। পাশাপাশি কিছু রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা পাওয়া যাবে না। অনেক গাড়ি ও গণপরিবহন পার্কিংয়ের স্থান না পেয়ে এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং করবে। যার ফলে অতিরিক্ত যানজট ও জনভোগান্তির সৃষ্টি হবে। এছাড়া ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের চলাচল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। চট্টগ্রাম নগরে দুই লাখ যানবাহন চলাচল করছে। সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত সড়ক নেই।
এদিকে রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর আবারও পে–পার্কিং চালুর উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালের ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১৭তম সাধারণ সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়। এরপরও সিএমপির আপত্তির কারণে পে–পার্কিং চালু করা সম্ভব হচ্ছিল না। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টম্বর অনুষ্ঠিত ৩২তম সাধারণ সভায় ‘পে–পার্কিং’ চালু করতে অনুমতি না দেয়ায় সিএমপি’র ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। একই সভায় মেয়র বলেন, কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহরে পে–পার্কিং চালু করা গেলে, চট্টগ্রামে করতে ট্রাফিক বিভাগের আপত্তি কোথায়? পে–পার্কিং করতে গেলে সেখানে বাধা, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে তো কোনো বাধা দিতে দেখছি না।
এরপর গত রোববার সিএমপি’র একটি প্রতিনিধি দল মেয়রের সঙ্গে তার দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে পে–পার্কিংয়ের বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। এর প্রেক্ষিতে স্থান নির্ধারণে সার্ভে করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ মে সিডিএর ৪৩৫তম বোর্ড সভায় জিইসিতে ফ্লাইওভারের নিচে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ২৮ থেকে ২৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা হোটেল দি পেনিনসুলাকে বরাদ্দ দেওয়া দেয়া হবে। যা চসিকের আপত্তিতে বাস্তবায়ন করতে পারেনি সিডিএ। পরবর্তীতে একই বছরের ১ ডিসেম্বর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার চসিকের কাছে হস্তান্তর করে সিডিএ। এরপর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতে পে–পার্কিং চালুর সিদ্ধান্ত নেয় চসিক।